আখলাকুল আম্বিয়া রাজু
রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস পরীক্ষা মাত্র দিয়েছে যাদব, যাদবের ভালো নাম অবদেশ কুমার যাদব। ছোটখাট গড়নের ছেলেটি দীঘির জলের মতো শান্ত। মেয়ে বন্ধু দূরে থা, তাঁর ভালো কোনো ছেলে বন্ধু নেই এখানে। কারো সাথে ভাব জমাতে পারেনা যাদব, চেষ্টাও করেনা। অবসর সময়ে রুমে বসে সময় তাড়ায় সে। সিলেট শহরটা তার পছন্দ হয়নি। এই পাঁচ বছরে কোথাও বেড়াতে যায়নি সে। শুধু গেলো শুক্রবার টিলাগড় ইকোপার্কে গিয়েছিলো যাদব, বেড়াতে নয় কয়েকটা ছবি উঠাতে।
একটা রিক্সা ভাড়া করে সারাদিন ঘুরাঘুরি করেছে সে। রিক্সাওয়ালার নাম রাজিব, ছেলোটা একটু বাচাল টাইপের। সারাক্ষণ বাংলা, ইংলিশ,হিন্দি ভাষায় গঠিত জটিল ভাষায় কথা বলেই যাচ্ছিলো রাজিব, যাদব কিছু কথা বুঝতে পারলেও উত্তর দেয়নি, তার এখানের কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা। সবাই যাদবকে স্বল্পভাষী বলে জানে, শুধু একজন জানে সে খুব কথা বলে, পৃথিবীতে শুধু একজনের কাছে সে বাচাল। কাল যাদবকে বিমানবন্দরে পায়চারি করতে দেখা গেছে। ছোট বাচ্চাদের মতো উত্তেজনা কাজ করছে তার ভিতরে। এ উত্তেজনা স্বপ্ন পূরণ করে বাড়ি ফিরার জন্য, নাকি অনেকদিন পর প্রিয়জনের সাথে দেখা হবে বলে? যাদবের রাজ্যে একটা মেয়ে আছে, মেয়েটা তার মামাতো বোন শ্রেয়সী। কথা ছিলো ডাক্তারি পাশ করার পর বিয়ে হবে তাদের। আজ যাদবের আরেকটা স্বপ্ন পূরণের দিন, চার বছর পর দেখা হবে শ্রেয়সীর সাথে ।যাদব কথা দিয়েছিলো ডাক্তারি পাশ করার আগে তাদের দেখা হবেনা, হবেনা প্রতিচ্ছবির বিনিময়। শুধু হবে শব্দের আর বর্ণের বিনিময়। বিমান ছেড়ে দিলো, যাদব ব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখে ভেসে উঠে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দেখা এক মেয়ের ছবি! মেয়েটিকে সে চিনেনা, তার জুনিয়র হবে হয়তো। মেয়েটি সেদিন লাল পাড়ের একটা শাড়ি পরে এসেছিলো। এই শাড়িতে মেয়েটিকে এতোটা ভালো লাগছিলো য, একদৃষ্টিতে অনেক সময় তাকিয়ে ছিলো। যাদব সাধারণত কোনো মেয়ের দিকে এভাবে নজর দেয়না। সেদিন সে কল্পনা করেছিলো এই শাড়ি পরে একদিন শ্রেয়সী তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে, সে অপলক দেখে যাবে শ্রেয়সীকে। কল্পনার বাস্তব রূপ দিতে সে আজ একটা শাড়ি নিয়ে যাচ্ছে, সেই মেয়েটার পরে আসা শাড়ির মতো শাড়ি। বাড়িতে যেয়ে কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবে শাড়িটা শ্রেয়সীর কাছে। তাদের যখন দেখা হবে, এই শাড়িটা পরে আসবে শ্রেয়স। সে চেয়ে থাকবে অপলক। কথাগুলো ভাবতেই ভালো লাগছে যাদবের, অনেকগুলো স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে তার। আচ্ছ! জীবন এতো রঙ্গীন কেনো? "বিমান এখনি ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করবে" ভয়েসটা শুনেই চমকে উঠলো যাদব! এতো দ্রুত এসে গেছে সে! হঠাৎ বিমানটা তীব্র ঝাঁকি দিলো, সাথে সাথে পিছনের দিক থেকে আগুন ধরে গেলো যাদব কিছু বুঝে উঠার আগেই আগুন তাকে গ্রাস করে ফেললো। যাদবের সব পুড়ে গেছে, শুধু প্রাণটা পোড়েনি, সে বুঝে গেছে তার প্রাণও চলে যাবে, পোড়া দেহে প্রাণ বেশিক্ষণ থাকতে পারেনা। তার মৃত্যু হবে। সাথে তার অনেকগুলো স্বপ্নের। যাদব প্রিয় মানুষটাকে কল্পনায় শাড়িটা পরাতে চাইলো। একটু সুখ দৃশ্য কল্পনা করে সে মরতে চায়। নাহ্ সে পারছেনা, প্রেয়সীর ছবি সে কল্পনায় আনতে পারছেনা,বারবার নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দেখা মেয়েটির ছবি ভেসে উঠছে। সে শোষবারের মতো শ্রেয়সীর মুখটা মনে করার চেষ্টা করলো। নাহ্! সে ব্যর্থ হলো, এই প্রথম সে কোনোকিছুতে ব্যর্থ এবং এটাই শেষ । নেপালের সেনাবাহিনী লাশ উদ্ধার করেছে যাদবের! যাদবের মা লাশের পাশে বসে কাঁদছেন, আর প্রলাপ বকছেন তার হাসিখুশি ছেলেটার মুখ আজকে এতো বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কেনো?
রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস পরীক্ষা মাত্র দিয়েছে যাদব, যাদবের ভালো নাম অবদেশ কুমার যাদব। ছোটখাট গড়নের ছেলেটি দীঘির জলের মতো শান্ত। মেয়ে বন্ধু দূরে থা, তাঁর ভালো কোনো ছেলে বন্ধু নেই এখানে। কারো সাথে ভাব জমাতে পারেনা যাদব, চেষ্টাও করেনা। অবসর সময়ে রুমে বসে সময় তাড়ায় সে। সিলেট শহরটা তার পছন্দ হয়নি। এই পাঁচ বছরে কোথাও বেড়াতে যায়নি সে। শুধু গেলো শুক্রবার টিলাগড় ইকোপার্কে গিয়েছিলো যাদব, বেড়াতে নয় কয়েকটা ছবি উঠাতে।
একটা রিক্সা ভাড়া করে সারাদিন ঘুরাঘুরি করেছে সে। রিক্সাওয়ালার নাম রাজিব, ছেলোটা একটু বাচাল টাইপের। সারাক্ষণ বাংলা, ইংলিশ,হিন্দি ভাষায় গঠিত জটিল ভাষায় কথা বলেই যাচ্ছিলো রাজিব, যাদব কিছু কথা বুঝতে পারলেও উত্তর দেয়নি, তার এখানের কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা। সবাই যাদবকে স্বল্পভাষী বলে জানে, শুধু একজন জানে সে খুব কথা বলে, পৃথিবীতে শুধু একজনের কাছে সে বাচাল। কাল যাদবকে বিমানবন্দরে পায়চারি করতে দেখা গেছে। ছোট বাচ্চাদের মতো উত্তেজনা কাজ করছে তার ভিতরে। এ উত্তেজনা স্বপ্ন পূরণ করে বাড়ি ফিরার জন্য, নাকি অনেকদিন পর প্রিয়জনের সাথে দেখা হবে বলে? যাদবের রাজ্যে একটা মেয়ে আছে, মেয়েটা তার মামাতো বোন শ্রেয়সী। কথা ছিলো ডাক্তারি পাশ করার পর বিয়ে হবে তাদের। আজ যাদবের আরেকটা স্বপ্ন পূরণের দিন, চার বছর পর দেখা হবে শ্রেয়সীর সাথে ।যাদব কথা দিয়েছিলো ডাক্তারি পাশ করার আগে তাদের দেখা হবেনা, হবেনা প্রতিচ্ছবির বিনিময়। শুধু হবে শব্দের আর বর্ণের বিনিময়। বিমান ছেড়ে দিলো, যাদব ব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখে ভেসে উঠে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দেখা এক মেয়ের ছবি! মেয়েটিকে সে চিনেনা, তার জুনিয়র হবে হয়তো। মেয়েটি সেদিন লাল পাড়ের একটা শাড়ি পরে এসেছিলো। এই শাড়িতে মেয়েটিকে এতোটা ভালো লাগছিলো য, একদৃষ্টিতে অনেক সময় তাকিয়ে ছিলো। যাদব সাধারণত কোনো মেয়ের দিকে এভাবে নজর দেয়না। সেদিন সে কল্পনা করেছিলো এই শাড়ি পরে একদিন শ্রেয়সী তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে, সে অপলক দেখে যাবে শ্রেয়সীকে। কল্পনার বাস্তব রূপ দিতে সে আজ একটা শাড়ি নিয়ে যাচ্ছে, সেই মেয়েটার পরে আসা শাড়ির মতো শাড়ি। বাড়িতে যেয়ে কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবে শাড়িটা শ্রেয়সীর কাছে। তাদের যখন দেখা হবে, এই শাড়িটা পরে আসবে শ্রেয়স। সে চেয়ে থাকবে অপলক। কথাগুলো ভাবতেই ভালো লাগছে যাদবের, অনেকগুলো স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে তার। আচ্ছ! জীবন এতো রঙ্গীন কেনো? "বিমান এখনি ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করবে" ভয়েসটা শুনেই চমকে উঠলো যাদব! এতো দ্রুত এসে গেছে সে! হঠাৎ বিমানটা তীব্র ঝাঁকি দিলো, সাথে সাথে পিছনের দিক থেকে আগুন ধরে গেলো যাদব কিছু বুঝে উঠার আগেই আগুন তাকে গ্রাস করে ফেললো। যাদবের সব পুড়ে গেছে, শুধু প্রাণটা পোড়েনি, সে বুঝে গেছে তার প্রাণও চলে যাবে, পোড়া দেহে প্রাণ বেশিক্ষণ থাকতে পারেনা। তার মৃত্যু হবে। সাথে তার অনেকগুলো স্বপ্নের। যাদব প্রিয় মানুষটাকে কল্পনায় শাড়িটা পরাতে চাইলো। একটু সুখ দৃশ্য কল্পনা করে সে মরতে চায়। নাহ্ সে পারছেনা, প্রেয়সীর ছবি সে কল্পনায় আনতে পারছেনা,বারবার নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দেখা মেয়েটির ছবি ভেসে উঠছে। সে শোষবারের মতো শ্রেয়সীর মুখটা মনে করার চেষ্টা করলো। নাহ্! সে ব্যর্থ হলো, এই প্রথম সে কোনোকিছুতে ব্যর্থ এবং এটাই শেষ । নেপালের সেনাবাহিনী লাশ উদ্ধার করেছে যাদবের! যাদবের মা লাশের পাশে বসে কাঁদছেন, আর প্রলাপ বকছেন তার হাসিখুশি ছেলেটার মুখ আজকে এতো বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কেনো?

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন