মুন ইমু মুন
প্রিয় মা!
কেমন আছো তুমি? এই কথাটা জিজ্ঞেস করতে চাইলেও কেমন যেন হাহাকার করে ভেতরটা। তবুও জানতে ইচ্ছে হয় কেমন আছ মা? মা, তুমি আমার কাছে বিধাতার দেয়া পরম আশীর্বাদ। মা, তুমি এক স্বর্গীয় অনুভূতির নাম, তুমি মমতাময়সম্পর্কের নাম, ভালোবাসার নাম তুমি। মা, তুমি এক চিলতে সুখের পরশের নাম।
অসীম আর অশেষের নাম মা। আমি যখন তোমার পেটে ছিলাম কী
অস্বাভাবিক কষ্টটাই না তোমাকে দিয়েছি। স্বাভাবিক কষ্টের চেয়েও
অতিরিক্ত যন্ত্রণা! দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ করে সুন্দর এই পৃথিবীর
মুখ দেখিয়েছো। আমার জন্মদান সম্পন্ন হয়েছে ফরসেভ পদ্ধতির দ্বারা।
যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক একজন মায়ের জন্য। ভালো করে একমুঠো
খেতেও পারো নি দশমাস। তারপরেও অবাক হয়েছিলাম এটা শুনে,ভজন্মের
পর আমার মাথায় চুল কম ছিলো আর তাই তুমি আফসোস করেছিলে আর
বলেছিলে আমার মেয়ের মাথায় চুল নেই কেন? ডাক্তার আন্টিকে
বলেছিলে সে কথা। উনি বলেছিলেন আমি যখন পেটে ছিলাম তখন
খেতে পার নি, তাই চুল কম। তবে জন্মের পর থেকে বেশি খাওয়াবেন
তাহলে চুল হবে। তুমি তাইে করেছ, এখন আমার মাথাভর্তি চুল। মা তুমি আমার
নির্ভরতার স্থান, আমার পৃথিবী, অন্ধাকার আলোর দিশা, প্রখর রোদে
সবুজ ছায়া, পিপাসায় সুপেয় জল, হাড় কাঁপাানো শীতে সোনালী রোঁদ।
তুমি আমার একমাত্র মামনি আর আমি তোমার নাড়িছেঁড়া একমাত্র সম্পদ। যখন
ইন্টারলেভেলে হোস্টেলে থাকতাম, প্রতি সপ্তাহে আসতে দেখা
করতে, কত ব্যস্ত তুমি তোমার সংসার মা-বাবা, ভাই-বোন সবাইকে সামাল
দিয়ে আমার জন্য সময় বের করতে। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স
পেলাম, ভর্তি হব ভাবছি, তখন আমাকে সহজে
দেখতে পারবে না, আসতে পারবে না আমার কাছে তাই তোমার সে কি কান্না। তখন না আমারও
অনেক খারাপ লেগেছিল। তারপরেও ভর্তি হয়েছিলাম। ক্লাস ও
করেছি।
একবার ছুটিতে বাড়িতে এলে তুমি বললে বেগম রোকেয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, সেদিন যেন আকাশ ভেঙে
পড়লো আমার মাথায়, কিন্তু তোমাকে খুশি রাখতে একমাসের মধ্যে
প্রিপারেসন নিয়ে নিলাম, চান্সও পেলাম। তখন তোমার খুশি আর কে
দেখে? তোমার খুশির কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ম্লান হয়ে গেলো।
এখন অবশ্য মাঝে মাঝে বলো, ওখানে থাকলেই ভালো করতে।
আমি তো একটা ডিমও ভাজতে পারতাম না। তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। তুমি
বললে, যাও! একা ডিম ভেজে খাও। আমিও কম জেদী নই। রান্নাঘরে
এলাম সবকিছু রেডি করলাম, ডিম গুলিয়ে ডিমের মধ্যে কেবল তেল
দিবো আর তুমি এসে হাজির, আর হা হা করে হাসতে শুরু করলে।
তোমায় নিয়ে স্মৃতিচারণ করলে রিম রিম খাতা ফুরোবে তবু শেষ
হবেনা। তুমি আমার আত্মার অংশ, সবচেয়ে ভালো বন্ধু। সারাজীবন তুমি
দিয়ে এসেছো।
আর আমি যা কিছু করতে চাই, সব তোমার জন্যই। আমি তোমাকে গর্বিত
করতে চাই।
যখন তোমায় নিয়ে ভাবি, তখন বৃদ্ধাশ্রমের হাজারো মায়ের মুখ চোখে
ভেসে, যে মা একটা সন্তানের জন্য এতকিছু করে দুভটো কচি হাতকে
মজবুত করে তোলে, সেই সন্তান কিভাবে সে হাত দিয়ে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। খুব খারাপ লাগে সেটা ভাবতে।।
তোমার সব চাওয়া পূরণ করতে চাই।বএমন মায়ের সন্তান হতে পেরে
আমি বড় বেশি গর্বিত, বড় বেশি উপকৃত। তুমিই তোমার পরিবারের
ব্যাকরাউন্ড। এমন সৎ, পরিশ্রমী, পরোপকারী, নিষ্ঠাবান, সত্যবাদী,
সাহসী, দ্বীনবান, যুক্তিবাদী, ন্যায়বান মায়ের সন্তান হতে পেরে আমি
অভিভূত। বিশেষণের বিশেষায়ণে তোমায় রঞ্জিত করার সাহস আমার
নেই। এত এত গুণের সমষ্টি তুমি!! তোমার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত হোক
আর তুমি আজীবন সুস্থ্য থাক এই প্রত্যাশায়...
ইতি

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন