জেসমিন জিনিয়া
প্রিয় ঝুমাপু,
কেমন আছো তুমি? কত্তদিন হয়ে গেল, খোঁজই নাওনা আমার! আচ্ছা আপু, ভালোবাসা মানেই কি নিজেকে খুইয়ে সারাক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করা?একটা সময় খুব করে তার মেসেজের জন্য অপেক্ষা করতাম। মিনিটের পর মিনিট ফোনের স্ক্রিনে চেয়ে থাকতাম, কখন রিপ্লাইটা আসবে। কখনো খুব তাড়াতাড়ি পাই, আবার কখনোবা পাইই না। এমনও হয়েছে টানা একদিনের মত কথা হয় না। অ্যাকটিভ দেখার পর ১ মিনিট দেরিতে রিপ্লাই পেলেই যেখানে অনেক কষ্ট হয়, সেখানে এএএকদিন! ভাবতে পারছো তুমি?
ঝুমাপু! জানো, সেদিন আমার কতোটা খারাপ লেগেছিলো? ১ দিন পর যখন রিপ্লাইটা পেলাম, খুব রাগ হচ্ছিলো। অনেকটা অভিমান করে ভেবেছিলাম, আমিও দেরিতে রিপ্লাই দিবো। কিন্তু ঝুমাপু, আমি না একদমই পারি নি। মেসেঞ্জারের চ্যাট হেডটা স্ক্রিনে ভেসে উঠা মাত্রই দেখে নিলাম কী মেসেজ দিয়েছে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, তো কি বলেছিলো জানো- "সব সময় কি আমাকেই নক করতে হবে?" তখন খেয়াল করেছিলাম, সবসময় তো আমিই প্রথমে নক করছিলাম, রিপ্লাইটাও দেরিতেই পাচ্ছিলাম। কিন্তু তারপরও আমাকেই শুনতে হয়েছিলো কথাটা। উত্তরে কিছুই বলতে পারিনি তাকে। তারপর অবশ্য সেইই নক দিতো, হয়তো বুঝতে পেরেছিলো বিষয়টা।
জানো ঝুমাপু, মাঝে মাঝে খুব রাগ লাগে, এত দেরিতে রিপ্লাই পাই বলে। আবার নিজেকেও অনেকবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু কখনই মনের সাথে পেরে উঠি নি। বার বার ব্যর্থ হয়েছি।
আচ্ছা ঝুমাপু, তুমি কি কখনো এমন সিচুয়েশনে পড়েছো? পড়লে একটু জানিও তো কতটা কষ্ট হয়, আর কিভাবে এই অবস্থা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা যায়।
জানো, যখন মেসেজের রিপ্লাই পাইনা, তখন আগের কনভারসেশন চেক করি। এক মেসেজই যে কতবার পড়ি তার ইয়ত্তা নাই। এভাবে দেরিতে রিপ্লাই পেতে পেতে কেমন জানি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু এখন কী হয়েছে জানো ঝুমাপু? এখন দেরিতে রিপ্লাই পেলেও খুব একটা কষ্ট হয় না, কিন্তু খারাপ লাগাটা থেকেই যায় মনে। এখন অতটা আশাও করি না আর। তুমি বলতেই পারো, সাথে সাথে রিপ্লাইতে কী আসে যায়? সে তোকে কতটা মূল্য দিচ্ছে, তোকে নিয়ে কতটা ভাবছে সেটাই মেইন।
কিন্তু কী বলোতো?
সে আমাকে নিয়ে কতটা ভাবছে, কতটা মিস করছে, কতটা বিভোর থাকছে আমাতে সেটা তো তখনই বুঝবো, যখন সে আমাকে শত ব্যস্ততার মাঝেও একটুখানি সময় দিবে। নাহয় ছোট্ট একটা মেসেজে জানিয়ে দিবে, আমি এখন ব্যস্ত আছি।
সত্যি বলছি ঝুমা আপু, এই মেসেজটা পেলে কখনোই তাকে বিরক্ত করতাম না, কিন্তু অপেক্ষা? অপেক্ষার প্রহর গুনতেই থাকতাম। কিন্তু সেটাও পাইনি কখনো।
ঝুমাপু, তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না। তবে এটাই সত্য। এমনও অনেক দিন গেছে, অনেকক্ষণ ফেসবুক/ইউটিউবে থাকার ফলে ফোনের চার্জ যখন শেষ পর্যায়ে, তখন ডাটা অফ করতে গিয়ে যদি দেখি তার নামের পাশের সবুজ বাতিটা জ্বলে উঠেছে, ফোন চার্জে দিয়ে হাতে নিয়ে বসে থাকি শুধুমাত্র তার রিপ্লাই পাবার জন্য। রিপ্লাইগুলো কিন্তু সাধারণের চাইতেও অতিসাধারণ হয়। কখনো তার মন খারাপের, কখনো আমার মন খারাপের।
আমার খুব ভালো একটা গুণ আছে, তুমি জানো কিনা জানি না। শত কষ্টের মাঝে অশ্রুসিক্ত চোখে ঝাপসা দেখতে দেখতেও লিখতে পারি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি।
যাকগে সেসব কথা। এখন একটা কথা খুব করে মনে হয় জানো- কোনো কিছু পেতে হলে সেটা পাবার সামর্থ্য থাকতে হয়, নয়তো সে আশা করাটাই মহাপাপ হয়ে দাঁড়ায়। আচ্ছা আপু, এটা কি আসলেই সত্য? আমার কাছে কিন্তু সত্যিই মনে হয়। তুমি হয়তো কাউকে মেসেজের পর মেসেজ দিচ্ছো, সারাক্ষণ তাকে নিয়েই ভাবছো, কিন্তু ওপাশের মানুষটা একবারও তোমার কথা মনে করছে না।তখন তোমার কি মনে হবে জানো? মনে হবে থাক না। সে পারলে আমিও পারবো, আর এভাবেই দূরত্বটা বেড়ে যায় দুজনের মাঝে।
তুমি হয়তো এতক্ষণে বলেই বসেছো, এতই যখন কথা বলার ইচ্ছে তো আমি কেন নিজে থেকে নক করি না! কেন নক করি না, জানো? যখন দেখি আমার আগের মেসেজটাই এখনো সীন হয়নি, সেখানে নতুন করে আর কী লিখবো তাকে? অথচ সে দিব্যি অ্যাকটিভ আছে, অন্যের পোস্টে লাইক, কমেন্ট করেই যাচ্ছে। ঠিক তখন না, আমি মেসেজ দিতে পারি না। খুব ইগোতে লাগে আমার, নিজেকে খুব বেহায়া মনে হয়। তার মেসেজগুলো বারবার চেক করতে পারি, তারপরও তাকে মেসেজ দিতে পারি না। আর এভাবেই তার প্রতি ফিলিংসগুলো হারিয়ে ফেলছি। এরকম চলতে থাকলে এক সময় ভালোলাগাটা কমে যাবে, কমে যাবে মিস করাটাও। আর আশা করা? সেটাও অনেক কমে যাবে ঝুমাপু। কেনো জানো?
কারণ, তুমি তো জানোই যে, তোমার চাওয়া যার কাছে খড়কুটোর চাইতেও মূল্যহীন, সেখানে আশা করাটা নিছকই মিথ্যে।
যাকগে বাদ দাও সেসব কথা, তোমার অনেক সময় নষ্ট করলাম। এজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
ঝুমাপু, তোমার বিষয়গুলো আমাকেও লিখে জানিও, যাতে সেটা পড়ে কিছুটা হলেও মনে জোর পাই আমি।
ইতি-

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন