মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১৮

টিফিনবক্স

শফিকুল ইসলাম

প্রমা, অতি মিষ্টি একটা নাম। মেয়েটির সোন্দর্য্যই প্রমাণ করে তার নামের সার্থকতা। সে পেশায় ডাক্তার। সবে পাশ করে বের হয়েছে। তাই সংসার পাতা হয়ে ওঠেনি। প্রাইভেট একটা ক্লিনিকে প্রমার যাওয়া আসা। অতি নিষ্ঠার সাথে তার কর্তব্য পালন করে। সকাল ৮ টায় যায় বিকাল ৫ টায়  বাসায় আসে। বাসা বলতে জামিলা ভাবির বাসা। জামিলা ভাবির ফ্ল্যাটে একটা রুম নিয়ে সাবলেট থাকে প্রমা। প্রমা জামিলা ভাবির কাছে অতি আদরের। সে শান্ত শিষ্ট মেয়ে হওয়ায়, সবাই তাকে 



পছন্দ করে। ক্লিনিকে যাওয়া এবং ক্লিনিক থেকে বাসায় ফিরে মেয়েটি নিয়ম করে ভাবির সাথে দেখা করতো। এ যেন তার নিত্যদিনের রুটিন। তারপর ফ্রেশ হয়ে শুরু হয় ননদ ভাবির গল্প।
গল্প চলতে থাকে জামিল ভাই বাসায় না ফেরা পর্যন্ত।  তারপর প্রমা তার রুমে চলে যায় তার প্রিয় গল্পের সাথিদের কাছে। প্রমার রুমের এ্যাকুরিয়ামে পোষা মাছগুলোই তার অবসর কাটানোর এক মাত্র মাধ্যম। এ্যাকুরিয়ামের মাছগুলোর সাথে খুনসুটি করেই কাটিয়ে দেয় তার অবসর সময়গুলো৷
প্রমা প্রতিদিনের মতো ক্লিনিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে এক পাগলী প্রমার সামনে এসে রুক্ষ চেহারায় একটা হাসি দিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। পাগলীকে দেখে তার খুব মায়া হলো এবং সাথে নেওয়া দুপুরের খাবারটা পাগলীকে দিয়ে দিলো। খাবারটা পেয়ে পাগলী ভীষণ খুশি, কথা বলতে না পারলেও হাসি দিয়ে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে। তারপর প্রশান্তির বাতাস গায়ে মেখে প্রমা তার ক্লিনিকের দিকে চলে গেলো। সারাদিন নিষ্ঠার সাথে ডিউটি শেষে সে বের হলো বাসার উদ্দেশ্যে। ফেরার পথে আবারো পাগলীর সাথে দেখা। পাগলী প্রমাকে দেখা মাত্রই সেই মায়াবী হাসিটা ছুঁড়ে দিলো প্রমার দিকে। এই হাসি যেন বারে বার একটা কথায় বলছে, আমার রাতের খাবারটা দিয়ে যাও। প্রমা পাগলীর হাসির প্রতি উত্তরে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে গেলো। সেদিন প্রমার হাসিটাই পাগলির রাতের খাবার হিসাবে গণ্য হয়েছিল।
প্রমা বাসায় ফিরে দেখলো জামিলা ভাবি এবং জামান ভাই ঝগড়া করছেন। তাদের ঝগড়ার বিষয় একটাই, আর সেটা হলো বাচ্চা। তাদের বিয়ের তিন বছর হলেও বাচ্চা হয়নি। দুর্বলতাটা কার সেটা প্রমাণ করে তাদের ভালোবাসার মাঝে দেয়াল তুলতে চায় না। তবুও মাঝে মাঝে তারা ঝগড়া করে মনের কষ্টগুলো একটু কমিয়ে নেয়।
প্রমা পরদিন সকালে আগের নিয়মেই বাসা থেকে বের হলো। শুধু  সাথে পাগলীর জন্য আলাদা একটা বক্সে খাবার নিলো। প্রমাকে দেখা মাত্রই পাগলী স্বস্তির হাসি দিলো। খাবারের বক্স পেয়ে পাগলী ভীষণ খুশি।
এভাবেই চলতে থাকে পাগলী ও প্রমার ভালোবাসা বিনিময়। প্রমার দেওয়া টিফিন বক্সটা এখন পাগলীর মহা মূল্যবান সম্পদ। যেখানেই যায় সাথে থাকে টিফিন বক্সটা।
হঠাৎ করে একদিন প্রমা বুঝতে পারলো পাগলী অন্তঃসত্ত্বা!  প্রমা হতবাক! এটা কীভাবে সম্ভব! সমাজ আজ কোথায়? পাগলীকেও ছাড় দিলো না! বিষয়টা নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে সাড়া পড়ে গেলো। পাগলীর প্রতি অনেকের মায়া বেড়ে গেলো। প্রমার মতো আরো কিছু মানুষ পাগলীর পাশে দাঁড়ালো।  দিনে দিনে পাগলী অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগলো। প্রমা অনুমান করে বুঝলো আর এক সপ্তাহ পরেই পাগলীর বাচ্চা ভুমিষ্ঠ হতে পারে। মনে মনে ঠিক করলো তার নিজ দায়িত্বে পাগলীকে তার ক্লিনিকে ভর্তি করবে। কিন্তু এলাকার কিছু মানুষ  সিদ্ধান্ত নিলো পাগলীকে কারো বাসায় আশ্রয় দেবে। তাই শেষ মেষ রহিম চাচার বাসার নিচে গ্যারেজে ঠাঁই হলো পাগলীর। পাগলী সব ফেলে গেলেও ফেললো না প্রমার দেওয়া টিফিন বক্স।
প্রমা প্রতিদিনের মতো আজও ক্লিনিকে গিয়েছিল।
হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন এলো, খবর পেলো তার মা অসুস্থ, তাই সে ছুটলো মায়ের টানে। প্রমার মা সুস্থ হতে হতে কেটে গেলো বেশ কটা দিন। তারপর আবার ফিরে এলো সে, জামিলা ভাবির বাসায়। বাসায় ফিরে দেখলো জামিলা ভাবি ভীষণ খুশি। মিষ্টি একটা বাচ্চা নিয়ে মহা আনন্দে আছে। পরের দিন প্রমা যথা সময়ে পৌঁছালো তার ক্লিনিকে। সকালের রাউন্ড প্রায় শেষ, হঠাৎ চোখে পড়লো পরিচিত একটা টিফিন বক্স এর দিকে।
সিস্টারকে জিজ্ঞাসা করলো এই টিফিন বক্সটা কার?
সিস্টার জানালো তিন দিন আগে একটা সিজার করা হয়েছিল। ঐ রুগি এই বক্সটা নিয়ে এসেছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? রুগি বক্সটা কোনোভাবেই ছাড়ছিলো না। জোর করে নিয়ে এখানে রেখে দিয়েছিলাম।
প্রমা বক্সটা হাতে নিয়ে একটা খালি বেডে বসে পড়লো। তার অজান্তেই ভিজে উঠলো দু'চোখের কোণা।
(18-03-18)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...