মুহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ
ভাইয়া ! আমার পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি আর যেও না। অনেকদিন পর বাসায় গেলাম, আম্মু আর ফুফু বারবার খেতে বলছিল। কারণ ভর দুপুরে অন্য মানুষের বাসায় গেলেও খেতে বলবে। এটাই স্বাভাবিক। আর সেখানে নিজের বাসায় তো স্বয়ং রান্নাঘরের হাড়ি পাতিলগুলোই তো খাওয়ার জন্য ডাকে। বাসায় সবাই ছিল, কিন্তু এতক্ষণে মাহবুব (৫ম শ্রেণি) মাহবুবা (৩য় শ্রেণি) মানে আমার ছোট ভাইবোনের চিল্লাচিল্লি পর্যন্ত কানে আসল না। পরে আম্মু বলল যে, ওরা স্কুলে, একটু পরে আসবে। এতদিন পর বাসায় এসে ওদেরকে ছাড়া কোন কিছু করার কল্পনাও করা যায় না।অপেক্ষায় রইলাম। একটুও ভাল লাগছে না। তবে বেশিক্ষণ অমন করে থাকতে হল না। আমাদের ছোট্ট নয়নমণিরা চলে এল। ব্যাগ তখনো নামায়নি। এর মাঝেই আদরমাখা কতগুলো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। তাড়াতাড়ি খাওয়ার জন্য মাহবুব ডাকতে শুরু করল। তাই চলে গেলাম। খাওয়ার সময় ও কতগুলো প্রশ্ন। এতদিন ছোট্ট পেটে কত্ত কথা যে পুষে রেখেছে! কোনটা আগে বলবে আর কোনটা পরে বলবে সেটা নিয়ে মাঝে মাঝে দু'জনর মাঝে তর্ক পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। যাইহোক খাওয়ার পর্ব শেষ হল। মাগরিবের পর আমাদের সোনামনিরা পড়তে বসেছে। মাহবুব তো কিছুটা বুঝতে পারে। কিন্তু মাহবুবা তেমন কিছুই বুঝে না। তাই ওকে নিয়ে বসলাম। অল্প অল্প করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। সামনে পরীক্ষা তাই মাহবুবা আদুরে গলায় বলল যে, ভাইয়া! "আমার পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি যাবা না, প্রতিদিন এভাবে পড়াবা"। কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। চোখদুটি ঝাপসা হয়ে এল। মনের কষ্ট তো আল্লাহর কাছেই বলতে হয়। ছেলেদের কর্মজীবন আর মেয়েদের শশুর বাড়ি অনেকটা একরকম হয়ে থাকে। ইচ্ছে হলেই সবকিছু করা যায় না। আমাদের নয়নমণির মিষ্টি আবদারটুকুও রক্ষা করার জো নেই। হায়রে কর্মজীবন, পরীক্ষা শেষ হওয়া তো পরের কথা। ভোরের আলো ফোটার আগে, কাক পক্ষীর চোখ কে ফাকি দিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়তে হবে। চুপিসারে দু'হাত তুলে স্বীয় প্রভুর কাছেই মিনতি করি। ওগো দয়াময়্য তুমি ওদের মেধাবী করো। অনেক বড় করো। আমার তো কাছে থাকার সাধ্য নেই, তাতে কি, তুমি তো আছো। তুমিই ওদেরকে মানুষ করো। তুমি তোমার কুদরতের ঝলকে তাদের সোনালী জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতি দান করো।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন