বিষণ্ণ আকাশ...........
লাবিব শাহেল
ঘোমট বাঁধা অন্ধকারে ভর করে রাত পৌঁছে গেছে মধ্যাহ্নে।টিপটপ করে বৃষ্টির মত ঝরে পড়ছে শিশির। কোথাও কোন মানুষের সারা শব্দ নেই। মিটিমিটি জ্বলছে রাশেদের সামনে থাকা ট্যাবল লাইট।রাশেদের চোখ দিয়ে অনর্গল পড়ছে কান্নাশ্রু। অশ্রুর কারণে ঝাঁপসা লাগছে তার চোখের সামনে থাকা সবকিছু। হ্যাঁ, এতক্ষণ সে কাঁদছিলো। কান্নার কারণ তার সামনে থাকা হলুদ কাগজে সুন্দর হাতের লিখা একটি চিঠি। চিঠিটা পাঠিয়েছে ইরফান। রাশেদের বন্ধু। একবছর হলো পরিচয় ওর সাথে। এত অল্প দিনে এত কাছে আসা হবে কল্পনাও করতে পারেনি রাশেদ। ইরফান মাঝে মাঝে চিঠি লিখে রাশেদের কাছে। সামাজিক যোগাযোগের এত এত মাধ্যমে থাকতেও ইরফান রাশেদকে চিঠি লিখে। কারণ জিজ্ঞেস করলে হেসে বলে তোকে চিঠি লিখতে অন্যরকম আনন্দ পাই। যা তুই এখনো বুঝিস না। রাশেদ হাসে। হেসেই বলে এত বুঝার দরকার নেই তুই চিঠি লিখিস। তাই ও লিখে।কয়েকদিন পরপর। কত সুন্দর করেই না চিঠি লিখে। রাশেদ পড়ে আর হিংসে করে। আজকেও চিঠি লিখেছে ইরফান। তবে অন্যদিনের মত না। সম্পুর্ণ অন্যরকম। রাশেদ একবার পড়েছে আর কাঁদছে। কতক্ষণ কেঁদেছে জানেনা সে। শুধু জানে, সে কাঁদছে। অনেক্ষণ কাঁদার পাঞ্জাবীর হাতল দিয়ে চোখ মুছে আবার চিঠির দিকে চোখ ফেললো রাশেদ ।ইরফান আজ ভিন্নরকম একটি চিঠি লিখেছ । ইরফানের কাছ থেকে এমন চিঠি কখনো আশা করেনি রাশেদ। কোন বন্ধুই হয়তো আশা করবেনা এমন চিঠি তার বন্ধুর কাছ থেকে। ইরফান লিখেছে...
প্রিয় দোস্ত!
চিঠির প্রারম্ভে একবুক ভালোবাস নিস। কেমন আছিস? আমাকে লিখিস। আজকাল তুই চিঠি লিখা বন্ধ করে দিয়েছিস। আমার খারাপ লাগছে। অবশ্য আমি মন খারাপ করিনি। তোর সময় হয়তো ব্যস্ততায় কাটছে এর জন্যই তেমন লিখছিস না। না হয় লিখতি। আমি তাই ভাবছি। তো যে কথা বলার জন্য আজকের চিঠি লিখা তা বলছি। হয়তো জানস কিবা জানসনা। জেনে থাকলেও আবার বলছি। মনযোগ দিয়ে শোন। আমি ধীরেধীরে খুব দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। শরীরে বাসা বেঁধেছে খুব বড় একটি রোগ। যা ক্রমেই বেড়ে চলছে । সেদিন ডাক্তার দেখিয়েছিলাম।কয়েকটি টেস্ট দিয়েছিলো। ডাক্তার টেস্ট রিজাল্ট দেখে একটু অবাক হয়েছিলেন। আর বলছিলেন আপনি এখনো চলাফেরা করতে পারছেন এর জন্য শুকরিয়া আদায় করুন। আমি একটুও অবাক হইনি বরং উচ্চস্বরে শুকরিয়া আদায় করেছি মহান রাব্বে পাকের। ও আচ্ছা বলাই হয়নি। ডাক্তার বলেছেন ক্যান্সার বাঁধিয়ে ফেলেছি শরীরে। কিছু ঔষধ দিয়েছে। তবে বেশী না! মাত্র ২৫৬ টাকার। ঔষধ চলছে। দোয়া করিস আমার জন্য।
প্রিয় দুস্ত! বিশ্বাস করবি কি না জানি না! তবু বলছি। তোকে খুব মনে পড়ে রে। মন চায় তোর সাথে হাটি। হাতে হাত রেখে। গল্প করি তোর কাঁধে মাথা রেখে। তা আর হয়ে উঠলোনা। আম্মুও বলছিলেন তোর কাছ থেকে ঘুরে আসতে। আমি সায় দেইনি। তোকে আমার নেতিয়ে পড়া দুর্বল শরীরটা কীভাবে দেখাবো বল!!আমি চাইনা আমাকে দেখে তুই কাঁদ। এম্নিতেই এখন কাঁদবি আমি জানি। তবে আমার সামনে কাঁদলে আমি সহ্য করতে পারতাম না রে! তাই আসিনি।
দোস্ত! আর লিখতে পারছিনা!হাত অবশ হয়ে আসছে। শেষে তোকে বলি! আমি হারিয়ে গেলে তুই ভেঙে পড়িস না প্লিজ! প্লিজ! আমাকে ধীরেধীরে ভুলে যাস। আর হঠাৎ কখনো যদি মনে পড়ে আমাকে কোন বাদল রাতে তখন আকাশের দিকে থাকিয়ে দেখিস আমি মিটমিট করে জ্বলছি একটি বিষণ্ণ তারকা হয়ে।
ইতি
ইরফান
পুনরায় চিঠিটা পড়ে কাঁদতে কাঁদতে চিঠিকে বুকের সাথে জড়িয়ে অনেক্ষণ নিরব বসেছিলো রাশেদ। চোখের বাঁধ ভাঙা অশ্রু গড়িয়ে স্পর্শ করেছিলো বুকের সাথে থাকা হলুদ চিরকুটকে। এর মধ্যেই আকাশে শুরু হলো গর্জন। রাশেদ ধীরে পায়ে এগিয়ে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখে টিপটিপ করে পড়ছে বৃষ্টিজল। রাশেদ ভাবছে, হয়তো আকাশ ও কাঁদছে বিষণ্ণতায়...

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন