বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮

একটি বাড়ি ও পুকুরঘাট

সালমান সা'দ


বাড়িটার ভেতর বাহির এখনো ভরা যৌবনবতী। চারপাশে বিশাল এরিয়া।  পুকুর টলটল । পুকুরে শ্যাওলামাখা জল। তাজা বাগান। আম কাঠাল লিচু আরো কত গাছ। আনারসের গাছ আমি প্রথম দেখি এখানে। লিচুফল একেবারেই বাচ্চাকালে কেমন থাকে এখানের গাছেই তা প্রথম দেখেছি।
কিন্ত পুরো বাড়িতে কাকপক্ষীটিও বাস করে না। হয়ত ঈদে-চান্দে পরিবারসহ
  একটু পদধূলি দিয়ে যান ঢাকানিবাসী কিংবা বিদেশপ্রবাসী জমিদারবংশের   কোন রক্তধারী। 
বাড়ির ভেতরে পুরনো আসবাবপত্র ঝকঝক তকতক করে সাজানো গোছানো।   ধুলির ঝাপসা আস্তর আছে , তবুও চমকদার চটকদার মজবুত পুরনো দিনের ফার্নিচারগুলো। দেয়ালে টাঙানো  হরিণের শুকানো মাথা, বাঘের ডেরাকাটা চামড়া। 
 এটাও জমিদার বাড়ি তবে রূপসা জমিদারের মূল বাড়ি এটা নয়। এ ছিল মূল জমিদারের আরেক ভাই।  মূল জমিদার বাড়ি আরেকটু দূরে, রূপসা বাজারে। 

আরেকবার, গত ঈদে চাঁদপুর গিয়ে এই মৌন নীরব জমিদারবাড়ির সাথে  সাক্ষাত করতে  আসছিলাম। বুঝেছিলাম বরাবরের মতোই কেউ হয়ত নেই এখানে।  গভীর নিবেশে মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বাড়িটার শিল্পকলা অবলোকন করছি।আকাশপাতাল কত কী ভাবছি 
এমন সময় ঠাস করে কাঠের পুরনো  দরজা খুলে গেল। একটা ষোড়শীর বিস্মিত ও হতভম্ব মুখ আমাকে দেখছে।  বের হতে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।  আমিও জনমানুষ্যির এমন আকস্মিক ও দমকা উপস্থিতি তে হতভম্ব। তাও আবার...  থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।  আমিও তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ ।  দেখতে খারাপ না চেহারা। কী মায়া কী জাদুরে শ্যামলমাধবী! 
বুঝতেই পারছেন ততক্ষণে ক্রাশ খাওয়াখাওয়ির পালা শেষ। হতভম্বতার রেশ শেষ।  আমি লজ্জা পেয়ে সরে আসলাম ও চলে গেলাম।  আর পিছে ফিরে তাকাইনি। এই প্রজন্মের এই রাজকুমারী এখন  মহানগরী ঢাকারই কোথাও হয়ত থাকে।  আর দশটা নিতান্ত  সাধারণ, অপরিচিত নাগরিকের মত। কেউ জানে না চিনে না। এই হল শেকড় ছিঁড়ে যাওয়ার শাস্তি।
 গ্রামের মানুষের চোখ নাক বড় বড় করা  মুখে  কত কিংবদন্তি শুনি তাদের পূর্বপুরুষদের!    

এখানে দশদিক নীরব, নিস্তব্ধ। মনে হয় মহাকাল এখানে স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। 
সময়ের চলমান স্রোত থেকে বহুদূর পেছনে জমিদার আমলে  চলে গেছি।  পুকুরঘাটে বসে ধ্যান করছি - আমি এক সুখী  জমিদার। প্রাচীনকালের কোন এক চান্নিপসর রাইত। জোসনার আলোয় সবকিছু  ফুট ফুট করছে।  সৌন্দর্যে  নিহত হয়ে যেতে মন চায় এমন চাঁদনী। আমি তন্ময় হয়ে বসে আছি। ভাবের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি আর কবিতা লিখছি রবীন্দ্রনাথের মতো। 
একটুপর জমিদার বাড়িটি থেকে বের হয়ে আসছে  মহারাণী। তার রূপের ঝলকে চাঁদ মুখ লুকোচ্ছে মেঘের আড়ালে, মুখের ওপর আলোছায়ার খেলা। জগতের সকল সুন্দরতার রহস্য যেন থির হয়ে আছে ওই মুখে ওই চোখে। 
তার চলার ঢমকে অলংকারের চমকে আমার রাজ্যের পুরো জোসনাস্নাত চরাচর ছান্দসিক নৃত্যে মাতোয়ারা হয়ে উঠছে। সে আসছে সে আসছে ধীরে...
পুকুরের বাঁধানো ঘাটে আমার পাশে বসতে যাচ্ছে...

আউশ শালা!  মশার কামড়ে কী যন্ত্রণা! ভাগি! দ্রুতই ওই স্বপ্নপুরি কে আলবিদা দেই।  বাড়ির পথে পা আগাই। অধুনা সময়ের ছেলে সময়ের বুকে ফিরে আসি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...