মৌসি
.
শ্রাবণ মাসের ৩ তারিখ। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। মায়ার ভালো লাগছেনা,কিছুই ভালো লাগছেনা। এই স্কুলে আজই ওর শেষ আসা। পাশে বসে আছে যে মেয়েটি,শ্রুতি আর কখনো ওর পাশে বসবেনা,গম্ভীর-বদমেজাজী আজিজ স্যারের কটমটে লেকচার শুনতে শুনতে পাশ থেকে চিমটি কাটবেনা,স্যার ক্লাস শেষে চলে যাবার পর এই নিয়ে ওর সাথে ঝগড়া বাঁধবেনা। মায়ার গলার ভেতরে কি যেন একটা দলা পাঁকিয়ে আসছে !
.
কাল সকালেই মায়া এখান থেকে চলে যাবে একেবারে দেশের অন্য প্রান্তে। ঘটনাটা ঘটছে
বাবার বদলি'র সুবাদে অথবা কুবাদে। মায়ার কিছুতেই মন চাইছেনা,এমনটা হোক। কিন্তু কিছুই করার নেই, চলে যেতেই হবে তাদের।
বাবার বদলি'র সুবাদে অথবা কুবাদে। মায়ার কিছুতেই মন চাইছেনা,এমনটা হোক। কিন্তু কিছুই করার নেই, চলে যেতেই হবে তাদের।
.
শ্রুতি এসব কথা জানে। আরো একুশদিন আগে মায়া ওকে বলেছে। তখন বলতে বলতে মায়া কেঁদে ফেলেছিলো। শ্রুতি কিন্তু কাঁদেনি,কিছু বলেওনি। কিন্তু মায়ার কল্পনা করতে ভালো লাগে যে, শ্রুতির বুকটা তখন দুঃখে ফেটে যাচ্ছিলো।
.
স্কুল ছুটি হলো। মায়া অন্য সব বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রোজদিনকার মতো শ্রুতির সাথে আলী'র মোড় পর্যন্ত আসলো। এবার মায়া যাবে একদিকে,আর শ্রুতি যাবে আরেকদিকে। হঠাৎ শ্রুতি মায়াকে ডাকলো:
--মায়া...মায়া চমকে ফিরে তাকালো,
--হু, শ্রুতি বল ।
--কালই তো তোরা চলে যাবি,না?
--হু...
--তো আমাকে ভালো-মন্দ কিছু বললি না যে !
--আমি....আমরা..হ্যাঁ..মানে হলো.....
--মায়া,কাল যাবার আগে একবারটি আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবি?
--কাল ? কাল তো খুব বিজি থাকবো । (অথচ মায়া মনে মনে ভীষণ খুশি)
আচ্ছা আসবোনি।কোথায় দেখা করবি?বল।
--এখানেই। ঐ কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে আমি থাকবো। ঠিক সকাল সাত টায় ।
--আচ্ছা...
--আর হ্যাঁ, তোর লাল রঙের জামাটা পরে আসবি,কেমন?
--আ..আচ্ছা।
মায়ার গলাটা ধরে আসে।
--এখন বাসায় যা। এক্ষুনি বৃষ্টি আসলো বলে। তখন বিপদে পড়বো আমি। যা ।
.
আজ সকাল সাতটা'র আগেই শ্রুতি কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়াল। হাতে ধরে রেখেছে কয়েকটা কদমফুল। মায়া এলো সাতটা বাজ'র চার মিনিট পর। এসেই শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
--তোকে খুব ভালোবাসি রে, শ্রুতি।
--আমার কথাটা শুনবি?
--হু, বল্ সোনা....
--বলছি তো । শুনতে পাচ্ছিস ?
--হুম,পাচ্ছি....
এরইমধ্যে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ।
.
#মৌসি

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন