আমিনুল ইসলাম তাহমিদ
বছর ঘুরে আবার এসেছে ৫ই মে ৷ ৫ই মের কথা মনে পড়লেই বাতিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়ের সবগুলো তন্ত্রীতে ৷ চেতনার বহ্নিশিখা জ্বলে ওঠে বুকের বাম পাশটায় ৷ রক্তকণিকাগুলো আমার অস্তিত্বজুড়ে মিছিল করে সেই চেতনার অমিত তেজে ৷ আর তাই শাপলায় যারা পরাজয়ের কলঙ্ক দেখে, তাদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ কুণ্ডলি পাকিয়ে ওঠে বুকের ভেতর ৷
আজ ৫ই মে। এক রক্তিম ইতিহাসের সাক্ষী। এ দিনটি ইতিহাসের এক কালো রাত। আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে এই দিনে শাপলা চত্বরে (শহীদি চত্বরে) আলেমদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়। যদিও সেটার বাস্তব দর্শক আমি নয়। তবে তা আমি টিভির পর্দায় অবলোকন করেছিলাম, যা কখনো ভোলা যাবেনা; ভোলারও নয়। এইদিনটি মুসলিম ইতিহাসের পাতায় চির অমর হয়ে থাকবে।
এইদিনে বাংলার তৌহিদীজনতা নাস্তিকদের শাস্তির দাবীতে মাথায় কাফনের কাপড় পরে, বুকে শহীদি তামান্না লালন করে শাপলার চত্বরে জমায়েত হয়েছিল। ঐদিনের কাফেলাতে শরীক হওয়ার ভীষণ ইচ্ছা ছিল আমার। কিন্তু বয়সে ছোট থাকার দরুণ ঐ শহীদি কাফেলাতে আর শরীক হওয়া হয়নি। তবুও রক্তের উষ্ণতা সইতে পারিনি। পারিনি নিয়ন্ত্রণ করতে। তবে সেদিনের অনুভূতি কখনো অন্তর থেকে মোছা যাবেনা। আমাদের ক্লাসের অনেকেই সেদিন গিয়েছিল। আমি ও আমার মত কতক 'হতভাগা ও হতাশাগ্রস্থ' রয়ে গেলাম মাদরাসার চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে। আর এদিকে এসব ভাবতে ভাবতে সেদিনের মতো শুরু হয়ে গেল রাজধানীর অবরোধ। সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি। নিজেকে প্রবোধ দেয়ার জন্য আমার কজন বন্ধুদের সাথে গেলাম এক বন্ধুর বাসায়।টিভির পর্দায় কাটাচ্ছিলাম মুহূর্তগুলো। দুপুর এগার-বারটা পর্যন্ত অবস্থা ভালোই দেখছিলাম। কিন্তু এর পর থেকে অবস্থা অবনতির দিকেই যাচ্ছিল! তখনো বুঝে উঠতে পারিনি এ অবনতির সীমা কোথায় গিয়ে পৌঁছবো!!
শেষ পর্যন্ত শুরু হয়ে গেল একের পর এক হত্যাকাণ্ড। টিয়ারগ্যাস, গরম পানি, এসিড সবকিছু নিক্ষেপ হতে লাগলো সাদা পাঞ্জাবি-টুপি পরা তৌহিদী জনতার উপর। আমি তখন বাকশক্তি থাকা সত্ত্বেও বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। নির্বাক হয়ে, দেখেছিলাম শুধু। জান্নাতের পথিক হয়ে সেখানেই ছিল আমার ভাইগুলো। ভাগ্যবান তাঁরা! শেষ পর্যন্ত অনেকটাই মর্মাহত হয়ে সন্ধার দিকে মাদরাসায় ফিরে আসি।
শেষ কথাঃ শাপলাটা তো বোবা— তাই চুপ করে সব দেখেছিল সে রাতের বিভীষিকা। আকাশ বিদীর্ণ করা চিৎকার দিতে চেয়েও, পারেনি। শুধু সাক্ষী হয়ে আছে উপযুক্ত সময়ের প্রতীক্ষায়।
একদিন শাপলাটার জবান খুলে দেওয়া হবে। সে সব বলে দিবে সুমহান বাদশাহকে, বলে দেবে কে কি করেছিল সেদিন?
একদিন শাপলাটার জবান খুলে দেওয়া হবে। সে সব বলে দিবে সুমহান বাদশাহকে, বলে দেবে কে কি করেছিল সেদিন?
প্রিয় জান্নাতি ভাইয়েরা! তোমরা ওখানেই থেকো। সুখে থাকো! দেখা হবে পরকালে সেই জান্নাতি উদ্দানে। যেখানে তোমরা এখন বিচরণ করছো।
৫/৫/২০১৮
রোজঃ শনিবার
৫/৫/২০১৮
রোজঃ শনিবার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন