আহমদ বিন মুখতার
একটি পর্যালোচনা।
বেবাক থাকতে হয় পরিস্থিতির বেহাল পরিণতি দেখে। আমরা ছোট। বাস্তবেই ছোট। জ্ঞানের বিচারে আমরা ভুবনময় মূর্খ। তবুও যখন নিজেদের মধ্যকার আত্মকলহ নিয়ে ভাবি, মিল-অমিলের ঠিকানা খুঁজে পাই না। নিজের মধ্যে খুঁজে পাই বিদ্রোহী চেতনা। অনুভূতিগুলো তীব্রদাহে দগ্ধ হয়। চেতনা বিকিয়ে যায়। অন্তরাত্মা আঁধার ও কলুষিত হয়। নিজের মূল্যবোধ কিছুক্ষণের জন্য নিজের মাঝে বিস্মৃত থাকে। খু্ঁজে পাই আগামীর পরিবর্তনযোগ্য অনেক বিষয়, পরিবর্তিত বহু জিনিসের পুনরুদ্ধারের চেতনা। মনে হয়, সংগ্রামে ঝেঁপে পড়ি। সত্যপ্রকাশে লেগে পড়ি। মাঠে-ময়দানে নেমে পড়ি। কিন্তু ইলেমের কমজোরি, বুদ্ধির দুর্বলতা, কাজের অপরিপক্বতার কথা মনে পড়লে চেতনার এই অদম্য অগ্নিতে দহিত এই প্রাণ এক সময় ঠেকে যায়। এখনকার বড়রা একদিন চলে যাবেন। বড় হবেন পরেরজন। তাঁর পরে তাঁর পরেরজন। এভাবে যেতে থাকবেন বড়রা। সময় চলতে থাকবে। যুগের বিবর্তন হবে। একসময় আমি-আমরা হবো বড়। হবো জাতির হালচালক। সমাজের কর্ণধার। এই মহান দায়িত্ব আমার উপর আসবে। আমি হব তখনকার নায়ক। দীনের প্রকৃত বিধান-গায়ক। সেদিন কি এই দায়িত্ব আামাকে পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আঞ্জাম দিতে হবে না! যিম্মাদারি পূর্ণতায় পৌঁছাতে হবে না!! যেদিন প্রতিটি বিষয়কে যথাস্থানে আনায়ন করার গুরুভার আমার মাথায় আসবে; সেদিন আমাকে করতে হবে দায়িত্বের ক্বদর। দিতে হবে সুন্নাতে রাসুলের পরিপূর্ণ মর্যাদা। কোরআনের বিধানের যথাযথ প্রয়োগ শিক্ষা। সেদিন লক্ষাধিক নিষ্পলক চক্ষুর চাহনিতে পরিণত হবো আমি। ক্বদর করতে হবে তাদের চাহনির। মূল্য দিতে হবে অনেকের অপেক্ষার। মানুষ চেয়ে থাকে যুগ যুগ ধরে একজন সফল কাণ্ডারির পথপানে। একজন চলে গেলে তার যোগ্য স্থলাভিষিক্তের আগমনপথে। তার যোগ্য ও উপযুক্ত আমাকেই হতে হবে। তার তীক্ষ্ণ ও সুচারু পদক্ষেপ আমাকেই গ্রহণ করতে হবে। হ্যাঁ,এই বোধ আজকাল বিড়ম্বনা দেয়। ভীষণ বিড়ম্বনা। ভাবিয়ে তোলে। ভাবাপন্ন করে রাখে। চারদিকের মানবেতর জীবন-যাপন আর মানবতার আর্তচিৎকার বারবার আমার ভগ্নতাকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। বুঝে উঠতে পারি যেন সময়ের সকরুণ এবং নগ্নচিত্র। নিতে পারি যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং পদক্ষেপ। শুনে আসছি প্রতিনিয়ত নিজেদের হেরে যাওয়ার বেদনাবিধুর গল্প, যেন নাটকীয়। দেখছি প্রত্যহ নিজেদের অঙ্গহানীর বাস্তবচিত্র, যেনো এরা ভেসে আসা খড়কুটো। শুনি লোমহর্ষক কল্পিত কিন্তু ভূতুড়ে গল্পের ন্যায় বিস্ময়কর যত কাহিনী। চেয়ে থাকি তখন বিবর্ণ বদনে। মুখে রাজ্যের হতাশা নিয়ে। হারিয়ে যায় যেন তিমিরের অতল গহ্বরে।কিন্তু নিরাশায় গা এলিয়ে দিইনি। নিভু নিভু আাশার প্রদীপের শেষ আশাটুকু ফুৎকারে নিভিয়ে দিইনি। হয়ত প্রভাতে হাসির কোন ধ্বনি কর্ণে প্রতিধ্বনিত হবে। আযানের সুরে মমতার লহরি আসবে কর্ণকুহরে।কিন্তু হায়! উদ্ধার কর্মীরা শত শ্রমে ক্লান্ত-শ্রান্ত। তাদের হৃদয়সমূহ অঙ্গে অঙ্গে ঝিমিয়ে পড়েছে। পাঁ বাড়ানোর দিব্যি সাহস ফুটে উঠছেনা তাদের বুকে। এতসব দেখে মানবতা আজ কাঁদছে। নীরবে কেঁদে যাচ্ছে। সাহস হারিয়ে ফেলেছে মজলুম জনতা। এ বুঝি মৃত্যুপুরী। জনমের স্বাদ বুঝি এতটাই তিক্ত। এ বুঝি জীবন! বাঁচার ইচ্ছা বুঝি এতই অর্থহীন। এটাতো মাত্র একটি সূরত। এরকম শত নগ্ন ও অর্ধনগ্ন সূরতে আমাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। আমাদেরই কেবল বুঝে আসলোনা। কোথায় মুক্তি নিহিত। কোনটি অমর নীতি, শাস্ত্র বিহিত। নিজের পাওনা উদ্ধার আর ভোগ বিলাসে মত্ত রয়েছি দিবসজামী। কিন্তু ভাবিনি যে, এ বিলাসিতা আমার চরিত্রের জন্য কতটা বিধ্বংসী। আমার আত্মার স্বাভাবিক ভদ্র ও সভ্য অবস্থা হননকারী। আমার ভাইয়ের ভবিষ্যৎ দুর্দিনের কারণ। নিজের স্বার্থকে এত করে দেখেছি। এ কি আমার স্বার্থ হতে পারলোনা? এ জাতির সমস্যার সঠিক ও সুস্থ সমাধান আমার স্বার্থ হতে পারেনি? স্বার্থ হলো কদিনের এ বিষাক্ত ফলদায়ক তুচ্ছ বস্তু। এ স্বার্থ আমার পরকালের চিন্তাকে এভাবে কপাট দিয়ে রেখেছে যে, ভাই-বোনের প্রয়োজনকে ডাস্টবিনে ফেলে রেখেছি। জাতীয় এবং ধর্মীয় সঠিক সমাধানকে খুন করে দিয়েছি। তাহলে কেবল আমিই খুন হতে বাকী থাকলাম। খুনই হলাম; এরপরও সঠিক প্রয়োজন আমার বোধের অন্তরালে থাকলো! এরপরও সুবোধ উদয় হলো না!
(আমরা যেন ভাববার অবকাশ পাই)।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন