শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১৮

আতিফের জন্মদিন পালন

মোহাম্মদ জয় আলম

(১)
আজ আতিফের জন্মদিন। জামাল সাহেবের বাড়িতে বেশ ঘটা করিয়া জন্মোৎসব পালিত হইবে বলিয়া মনে হইতেছে। গেট বাঁধা হইয়াছে। উহার ললাটে একটা ব্যানার শোভা পাইতেছে। তাহাতে লেখা,'শুভ জন্মদিন'। সারা বাড়িতে নিয়নের বাতিও লাগানো হইয়াছে। পাড়ার ছোকরারা ঈষৎ ফাজলামো করিয়া সদর দরোজায় আর্ট করিয়া লিখিয়াছে 'শুভ পয়দা-দিবস'। বাহির থেকে বাবুর্চি আনা হইয়াছে। শুনা গিয়াছে,  কেকটাও নাকি হইবে ইয়া বড়।
আতিফের বয়স মোটে তিনি বৎসর। কিন্তু তাহার
চঞ্চলতা পঞ্চবর্ষী বালকের মত। শিম্পাঞ্জীর তুষারের সাথে গোলাপের রঙ মিশিয়া যৌথরঙা তাহার চেহারা এবং অমল চন্দ্রহাসি আর ডাগর চোখ দেখিয়া যদি কেউ ভাবিয়া বসে যে, তারকালোকের রাণী মর্তলোকে বেড়াতে আসিয়া তাহার রাজপুতকে ভুলিয়া ফেলিয়া গিয়াছে এবং সে রাজপুত হইলো আতিফ, তাহা হইলে খুব একটা ভুল হইবার কথা না।  এমন চিরপ্রার্থিত নয়নসুখ পুত্র জামাল সাহেবের ঘর আলোকিত করিয়া আসিয়াছে। অতএব তাহার জন্মদিন অবশ্যই পালনের দাবিদার!
সন্ধ্যার পর নিয়নের বাতিগুলো ছন্দময় খেলা আরম্ভ করিল। ছোট বাচ্চারা সে আলোয় লুকোচুরি খেলিতেছে। একটি বড় রুমে কেকোৎসবের আয়োজন করা হইয়াছে। প্রতিবেশী ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন উপস্থিত।  টেবিলে তিনতলা  বিশিষ্ট একটা কেক আনিয়া রাখা হইল। সেটির শিরে একটি মোমবাতি ঝাণ্ডার মত স্থাপন করা হইয়াছে। ঝাণ্ডার মতই আগুনের শিখা সামান্য দুলিতেছে। আতিফকে কোলে করিয়া তাহার মাতা-পিতা আসিলেন। হাত তালি শুরু হইল। এবার কেক 'জবাই'র পালা। প্রথা হইল, যাহার জন্মদিন সেই ফুঁৎকার দিয়া আগুন নিভাইবে। সুতরাং,  আমাদের পিচ্চি আতিফকেও সে আমল বাদ দেয়া চলিবে না।
জামাল সাহেব আতিফকে সামান্য ঝুঁকাইয়া বেশ আহ্লাদ করিয়া বলিতেছেন,  ফুঁ দাও বাবা, দাও, সোনা।
আতিফ দেখিল,  একটা খাম্বার উপর সুন্দর কী যেন নড়িতেছে। খাইতে হয়তো বেশ লাগিবে। আতিফ আরেকটু ঝুঁকিয়া হা করিয়া মুখে আগুন পুরিলো।  দুএক সেকেন্ড,তাহার কোমল ঠোঁটে ফোসকা পড়িয়া গেল। শুরু হইল আতিফের চিৎকার। শেষে অনেক চেষ্টা তদবির করিয়া শান্ত করা হইল আতিফকে। এবার জামাল সাহেব মোমবাতির ঝামেলায় গেলেন না। তাহাকে টেবিলে বসাইয়া হাতে ছুরি দিয়াছেন, কেক কাটার জন্য। আতিফ এবার খেয়াল করিল, তার সামনের বস্তুটা বেশ লকলকে। হাত ডুবাইলে হয়ত মজার একটা ব্যাপার ঘটিতে পারে। আতিফ বাম হাতে বেশ জোরে কেকের উপর থাবা বসাইল। থেঁতলিয়া গেলো কেকের একটা দিক। তাহার মা চুকচুক করে আফসোসের সাথে তাহাকে সরাইলেন।  পরিষ্কারে মন দিলেন।  এখনো ছুরিটা আতিফের হাতে।
র‍্যাপিং সুঁতোয় প্যাঁচানো ধারালো ছুরিটা আতিফ ঝনঝনির মত মনের আনন্দে ঘুরাইতে লাগিল। জামাল সাহেব অন্যমনস্ক ছিলেন। আতিফ ছুরি ঘুরাইতে ঘুরাইতে একপর্যায়ে তাহার বাবার গালে পোছ বসাইয়া দিলো। রক্তারক্তি কাণ্ড। জামাল সাহেব তাহার বেটাকে ছুরিমুক্ত করিয়া গালের দিকে মন দিলেন।  বেশ কাটা গিয়াছে। আজকের শুভ জন্মদিন অশুভ হইয়া মাথায় উঠিল।
(২)
কোনমতে লাজ রক্ষা করিয়া আগতদের খাওয়াইয়া বিদায় দেয়া হইল। জামাল সাহেবের স্ত্রী বেশ কড়া মহিলা। ঘরের কর্তী। তিনি শুরুতেই জন্মদিন নামের এই ফালতু কাজের পক্ষে ছিলেন না। কেবল স্বামীর পীড়াপীড়িতে রাজি হইলেন। এবার যখন সেই জন্মদিনই নানান ঝামেলা বাঁধাইয়া দিল, তখন তাহার রাগ তুঙ্গে উঠিবার কথাই।
মিস জামাল শর্ত লাগাইয়া দিলেন, যদি জামাল সাহেব দশবার কান ধরে উঠবস না করেন এবং এই শপথ না নেন যে, আর জীবনেও জন্মদিনের নাম লইবেন না; তাহা হইলে  তাহার জন্য ঘরের দরজা বন্ধ। তিনিও বাপের বাড়ি আতিফকে নিয়া চলিয়া যাইবেন।
জামাল সাহেব কান ধরে উঠবস করিতেছেন। প্রত্যেক দফায় বলিতেছেন, মাফ কইরা দাও, আর করুম না।
আতিফ মায়ের কোলে। সে অবাক হয়ে বাপের কাণ্ড দেখিতেছে। ইহা আবার কী জিনিস!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...