এর দুএকদিন পর আমি বরিশাল চলে আসি। আমার কর্তা তখন রহমতপুর নারিকেল বাগানে কর্মরত। বছর ঘুরতেই অনাগত শিশুর আগমন ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি আমাদের জীবনে। আবার আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি আগের বারের মতো না। প্রতি মাসেই চেকআপের জন্য বরিশাল শহরে যেতে হতো। দারুন হাসিখুশি একজন মধ্যবয়স্ক ডাক্তারের পেসেন্ট আমি। এত সুন্দর গল্প করতে করতে উনি আমাকে দেখতেন, আমার খুব ভাল লাগত। মনেই হতো না নিকটজনদের থেকে অনেক দূরে আছি।
সরকারি অফিসারদের এই একটা সুবিধা, যে কোন ছোট শহরে সবাই সবার আত্মীয় বন্ধু। সবাই সবাইকে ভাই ও ভাবি ডাকছে। এক নবীন ডাক্তার নুতন পোস্টিং০ হয়ে হাসপাতালে এলো। তার সাথে পরিচয় হওয়ার পর সে আমাদের নারিকেল বাগানে বেড়াতে এল। এখানকার সবার সাথে পরিচিত হতে। বেশ কিছু দিন পর, মাসিক চেকাপের জন্য হাসপাতালে গেলাম। আমার চেকাপের পর ডাক্তারের রুমে এসে দেখি নবীন ডাক্তার বসে আছে। আমাকে দেখে সে সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল বলল, 'ভাবী আপনার নাকের বামপাসের এই তিলটা না থাকলে আপনাকে আরো সুন্দর লাগত। এক কাজ করেন, এটা অপারেশন করে ঠিক করে দেই।
আমি বললাম না ভাই এই বেশ আছি। আল্লাহ্ আমাকে যেমন চেয়েছেন তেমন সৃষ্টি করেছেন। সে আমাকে বুঝাতে না পেরে, আমার কর্তাকে রাজি করাতে চেষ্টা করতে লাগল। আমি মনেমনে হাসছি, যেমন চেহারা আমার তাতেই মানুষের যন্ত্রনায় অস্থির বিয়ে করেও শান্তি নাই। আবার তিল অপারেশন। যতদিন না চিটাগাং এসেছি তার আগ পর্যন্ত কিযে যন্ত্রনা করেছে এই ডাক্তার। আমার কর্তা আরো মজা পায়, ' আরে অপারেশন করেই দেখনা। যদি হিমালয় গলে যায় তবুও তুমি আমার।' জানে আমার অপারেশনে ভয়।
আহামরি সুন্দরী বলতে যা বুঝায় আমি তেমন না। চাকমা চাকমা চেহারা আমার, রং ও কাল লম্বা ও না মাত্র ৫ ফুট। তবু কেন যে ছেলেরা আমাকে পছন্দ করে সেটা আমার কাছে আজো রহস্য। যারা করত বা করে তারাই ভাল বলতে পারবে।
( চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন