রবিবার, ১৭ জুন, ২০১৮

অভ্র অাবির

Soulmate...


বাহ সুন্দর বাজাও তো..!
ক্যাম্পাসে বসে বন্ধুদের সাথে গিটার বাজাচ্ছিলাম।তখনি কেউ কথাটি বলে উঠলো।
গিটার বাজাতে আমার বেশ ভালই লাগে।বলতে গেলে এটাই আমার হবি...
আমি মাথা তুলে তাকাতেই দেখি একটা মেয়ে হাস্যজ্বল মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে...
.
মেয়েটা দেখতে কম সুন্দরী না।দেখতে বেশ।একদম আমার মনের মত।মনে হচ্ছে মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছি।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই মেয়েটি বললো,
-গিটার আপনি বেশ ভালই বাজাতে পারেন।
---জ্বী ধনবাদ।
---আমি মায়া।কথাটি বলেই মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দিল।
বাহ।মেয়েটা দেখতে যেমন মায়াময় ঠিক তেমনি নামটাও মায়াময়।মায়া।ভালবাসার নাম।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে মায়ার সাথে হাত মিলিয়ে বললাম,
--- আমি অাবির আচ্ছা আপনি কি ক্যাম্পাসে নতুন?
--- হ্যা।এই দুদিন আগে এডমিট হয়েছি।প্রথম বর্ষ।
--- ও আচ্ছা।আমি তৃতীয় বর্ষ। যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই বলবেন।
--- জ্বী ধন্যবাদ।তবে আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।
--- হুম।
--- আজ তাহলে আসি।বাই।
--- বাই

আমার বাই বলার সাথে সাথে মেয়েটা একগাল মুচকি হেসে চলে গেলো।আমি তো এবার মায়ার হাসির মায়ায় পড়ে গেলাম...
.
আমি বসতেই ফ্রেন্ডরা আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন এই মাত্র চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে আসলাম।আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই মেহেদী বললো,
--- কিরে তুই তো আগে কোন মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতি না।কাহিনি কি?
--- আমি তো আটকে গেছি রে।
--- এই কোথায় আটকে গেলি।
--- মায়ার বাধনে।
মায়ার সাথে এভাবেই আমার পরিচয়।এরপর থেকে প্রায়ই মায়ার সাথে দেখা হতো, কথা হতো..
.
অাবির সাহেব!
ক্লাস শেষে বাসায় যাচ্ছিলাম তখনি কেও আমার নাম ধরে ডাক দিল।আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি মায়া হাত নেড়ে আমাকে দাঁড়াতে বলছে।
আমি দাড়াতেই মায়া আমার কাছে এসে বললো,
--- আজ গিটার বাজাবেন না?
--- ইচ্ছে করছে না।
--- কিন্তু আমার যে আজ ভিষণ শুনতে ইচ্ছে করছে।
মায়ার কথায় আমি আর কিছু বললাম না।ওর জন্যে আমি সব করতে পারি।আর এটা তো কিছুই না।আমার চুপ থাকা দেখে মায়া বললো,
--- আচ্ছা থাক লাগবে না।
--- কোথায় বসবে?
মায়া একটু অবাক হয়েই বললো,
--- কেন?
--- গিটার বাজাতে হবে তো।
আমার কথায় মায়ার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।মায়া বললো,
--- আমার একটা পছন্দের জায়গা আছে।যাবেন?
--- হুম যেতে পারি যদি তুমিও তুমি করে বলো।
আমার কথায় মায়া মায়াময় হাসি দিয়ে বললো,
--- হুম চলো।
.
আমি আর মায়া রিক্সায় বসে আছি।তবে আমি বেশ দূরত্ব নিয়েই বসেছি।যাতে ওর গায়ের সাথে লেগে না যায়।এদিকে আমার অবস্থাও বেশ খারাপ।আর একটু হলে পড়েই যাব...
আমার এ অবস্থা দেখে মায়া আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না।একটু জোরেই হেসে দিল।তবে আমি কিছু বললাম না।সেভাবেই রইলাম।মায়া হাসি থামিয়ে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললো,
--- আর একটু হলে তো পড়ে যেতে।আমার দিকে চেপে বসতে এত অসস্থি কেন।
আমি মায়ার কথায় কিছু বললাম না।তবে এখন বেশ ভালই লাগছে।কেমন যেন অন্যরকম অনুভুতির মধ্যে ডুবে আছি।অন্যরকম...
.
তুমি কি আমাকে সারাজীবন গিটার বাজিয়ে শোনাবে..?
মায়ার কথায় আমি থেমে গেলাম।আমি ওর চোখের দিকে তাকাতেই বুঝে গেলাম ও কি বুঝাতে চাচ্ছে।আমার উত্তর শোনার জন্যে কেমন যেন আকুল হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি মায়াকে বললাম,
--- তুমি কি আমাকে সারাজীবন তোমাকে গিটার বাজিয়ে শোনানোর অধিকার টুকু দেবে?
মায়া আমার কথা শুনে মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি মায়াকে কিছু না বলে বুকে আগলে নিলাম।আমি যে এবার মায়ার বাধনে বেধেই গেলাম।
মায়াকে নিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি।তবে এখন আর ভুল করিনি।একদম মায়ার দিকে ঘেষেই বসেছি।আর মায়া আমার হাত ধরে মুচকি মুচকি হাসছে।হাসুক না কিছুক্ষন মেয়েটা।দেখতে মানা কি....
.
মায়ার সাথে রিলেশনের পর আমার রুটিনটাও যেন পালটে গেলো।সকালে ফোন দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেওয়া,খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস করা, কোথায় যাই কি করি সবকিছুই যেন মায়াই নিয়ন্ত্রন করে।
আমার এসব বেশ ভালই লাগে।ওর উষ্ণ শাষন যেন আমাকে নতুন করে গড়ে তুলছে।
আজ আমার জন্মদিন। আর এদিকে মায়ার ফোন বন্ধ।সেই সকাল থেকে ফোন দিচ্ছি। এখন প্রায় দুপুর হতে চললো।কিন্তু মেয়েটার কোন খোজ নেই।
আমি ফোনটা পকেটে রাখতেই ফোনটা বেজে উঠলো।এখন আবার কে।আমি ফোন বের করতেই দেখি মায়ার ফোন।আমি আর দেড়ি না করে ফোন ধরে যখনি কিছু বলতে যাব তার আগেই মায়া বললো,
--- আমি আমার পছন্দের জায়গায় আছি।চলে এসো।
মায়া কথাটি বলেই ফোনটা রেখে দিল।
.
কি মেয়েরে বাবা।আমাকে কিছু বলতেও দিল না।
তবে মায়ার পছন্দের জায়গাটা যে ওর সাথে যেতে যেতে আমারও পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে এইটা হয়তো মায়া জানে না।আমি আর দেড়ি না করে মায়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম...
ওইতো মেয়েটা বসে আছে।আমি ওর পাশে যেতেই মায়া বললো,
--- শুভ জন্মদিন বাবুটা।
মায়ার কথায় আমি কিছু বললাম না।চারদিক ফুল দিয়ে সাজানো।মাঝখানে কেক নিয়ে মায়া বসে আছে।আমার এ অবস্থা দেখে মায়া বললো,
--- আসো কেক কাটো।অনেক দেড়ি হয়ে গেছে।
মায়ার কথায় আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।মেয়েটা আজ আমার পছন্দের কালো শাড়ি পড়েছে।দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে ওকে।আমি আবার নতুন করে প্রেমে পড়ে যাচ্ছি ওর।
এই নাও গিফট।
'
কেক খাওয়া শেষ হতেই মায়া একটা নতুন গিটার এগিয়ে দিয়ে কথাটি বললো।আমি মায়াকে কিছু বলার আগেই মেয়েটা আবারও বললো,
--- এইটা কিনতেই একটু দেড়ি হয়ে গেলো।সরি বাবুটা।
আমি মায়াকে এবার জড়িয়ে ধরে বললাম,
--- আমার কিছুই লাগবে না শুধু তুমি ছাড়া।
--- আজ থেকে এটাই আমাকে বাজিয়ে শোনাবা।সবসময় তোমার কাছে রাখবা।সবসময়...
বেশ কয়েকদিন হলো মায়ার সাথে দেখা হচ্ছে না।আসলে দেখা হচ্ছে না বললে ভুল হবে আমিই দেখা করতে পারতেছি না।এক্সামের চাপে একটুও সময় পাই না মেয়েটার সাথে একটু ঘোরার জন্যে।এদিকে মায়াও হয়তো বেশ রেগেই আছে।
এক্সাম শেষে বের হতেই দেখি মায়া ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।ভালই হলো মেয়েটাকে অনেক দিন দেখি না।ভালই লাগছে।আমি ওদের সামনে যেতেই সবাই দুলাভাই বলে চেঁচিয়ে উঠলো।আমি মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে...
.
আমি মায়াকে কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমাকে টেনে একদম গেইটের সামনে নিয়ে এসে বললো,
--- এক্সাম কেমন হলো?
--- হুম বেশ ভাল।কেমন আছো?
--- এতক্ষন ভাল ছিলাম না।
--- এখন?
মায়া এবার আমার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
--- তুমি পাশে থাকলে আমি সবসময় ই ভাল থাকি।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই মায়া বললো,
---- চলো আমাকে বাসায় রেখে তুমিও বাসায় যাও।
আমি মাথা নাড়িয়ে মায়াকে নিয়ে রিক্সায় চেপে বসলাম।এদিকে মেয়েটা একনাগাড়ে বলতে শুরু করলো,
বাসায় গিয়ে গোসল করবা,খাবা, তারপর ঘুমাবা।এসব বলতে বলতেই মায়াদের বাসার সামনে চলে এলাম।মায়া এবার আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার গালে একটা চুমু একে দিয়ে দৌড়ে বাসার ভেতরে চলে গেলো।তবে অনুভুতিটা বেশ ভাল ছিল।
.
আমি রিক্সাওয়ালাকে যেতে বলতেই মায়া গেইট দিয়ে বের হয়ে এসে বললো,
-বাসায় গিয়ে ফোন দিও।
কথাটি বলেই মায়া আবার ভেতরে চলে গেলো।পাগলী মেয়ে একটা।
বাসা থেকে বের হতেই দেখি নীলা দাঁড়িয়ে। সাথে ওর আম্মু।ওদের দেখে বুঝতে বাকি রইলো না যে রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করতেছে।
নীলা আমাদের পাশের ফ্লাটেই থাকে।খুব লক্ষী একটা মেয়ে।আমাকে দেখেই নীলা বলিলো,
-অাবির ভাইয়া কেমন আছেন?
-এইতো ভালো।তুমি?
-হুম ভাল।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই নীলার মা বললো,
-বাবা তুমি তো নীলার কলেজের সামনে দিয়েই ভার্সিটি যাবে ওকে যদি একটু নামিয়ে দিতে যেতে তাহলে আমি টেনশন ফ্রি থাকতাম।
নীলার মায়ের কথা শুনে আমি একটু বিরক্তই হলাম।এসব ঝামেলা আমার একদমই পছন্দ না।কিন্তু ওনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে উনি আসলেই খুব চিন্তিত।হয়তো মেয়ের জন্যেই।
আমি বললাম,
--- ঠিক আছে সমস্যা নেই।আমি নামিয়ে দিয়ে যাব।আপনি বাসায় যান।
আমার কথায় নীলার মা আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে উপরে চলে গেলো...
.
নীলাকে ওর কলেজের সামনে নামিয়ে দিতেই মেয়েটা বললো,
--- ধন্যবাদ ভাইয়া।আসলে আম্মু আমাকে একলা ছাড়তে ভয় পায়।তাই প্রতিদিন আমার সাথেই আসে।
--- ও আচ্ছা।তাহলে তুমি এখন ভেতরে যাও।
--- আচ্ছা ভাইয়া।
ক্লাস থেকে বের হতেই মায়া আমার সামনে এসে মুখে রাগি ভাব নিয়েই দাঁড়ালো।আমি কিছু বলার আগেই মায়া বললো
.
--- আজ কি কথা ছিল?
আজ আবার কি কথা থাকবে।আমি একটু ভাবলাম।কি এমন কথা ছিল।
এই রে আজ তো ওকে নিয়ে ভার্সিটি আসার কথা ছিল।কাল রাতেই ফোন করে বলেছিল ওকে নিয়ে যেতে।আমি বললাম,
--- আসলে একটা কাজ ছিল।সরি।
--- মেয়ে নিয়ে ঘোরাই তো তোমার কাজ।
বলে কি মেয়েটা আমি আবার কখন মেয়ে নিয়ে ঘুরলাম।মায়া আবার ও বললো,
---মেয়েটা কে?
---কোন মেয়ে?
---যাকে নিয়ে আজ রিক্সায় আসলে?
---তুমি নীলার কথা বলতেছো।
---ও মেয়েটার নাম নীলা।ভাল।তুমি আমাকে না এনে নীলার সাথে ঘুরলা?
--- আসলে তুমি যেটা ভাবছো সেটা না।ও আমার ছোট বোনের মত।
--- থাক তুই তোর নীলাকে নিয়ে। আমাকে আর কখনও ফোন দিবি না।কথাটি বলেই মায়া কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো......
.
প্রথমেই ভেবেছিলাম কিছু একটা হবে।মায়াদের বাসার সামনে দিয়েই যে আসতে হবে সেটা মনেই ছিল না।উফ কি যে বিপদে পরলাম।
আজ প্রায় পাঁচদিন হলো মায়া কে দেখিনা।ফোন দিলেও ধরে না।ওর বাসার সামনে গিয়ে ফোন দিলাম,মেসেজ দিলাম তবুও মেয়েটা বের হলো না।এদিকে মায়াকে দেখতে না পেরে আমার অবস্থাও খারাপ।যে মেয়েটাকে একদিন না দেখে থাকতে পারি না তাকে আজ পাঁচদিন হলো দেখিনা।
ছাদে বসে চাঁদ দেখছি আর সিগারেট খাওয়ার বৃথা চেষ্টা করছি।সবাই বলে সিগারেট খেলে নাকি কষ্ট কমে যায়।কিন্তু আমার তো কাশিই থামছে না।মাত্র একবার মুখে নিয়ে তাতেই এই অবস্থা।পুরো প্যাকেট কিভাবে শেষ করবো।
যেটা পারো না সেটা করতে যাও কেন?
'
আমি সিগারেটে টান দিতেই কাশি শুরু হয়ে গেলো।তখনি কেও একজন কথাটি বললো।তবে কন্ঠটা বেশ পরিচিত।আমি সিগারেট হাতে পেছনে তাকাতেই দেখি মায়া দাঁড়িয়ে।
চাঁদের আলোতে মায়ার মুখ যেন আরও মায়াময় হয়ে উঠেছে।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই মায়া বললো,
--- নীলার সাথে দেখা হয়েছিল।ও আমাকে সব কিছু বলেছে।
কথাটি বলেই মায়া মাথা নিচু করে একটু জোরেই কেঁদে দিল।আমি মায়ার কাছে গিয়ে ওর মাথা তুলে চোখের পানি মুছে দিতেই মেয়েটা আমার ঠোটে মিষ্টি চুমু একে দিয়ে বললো,
--- আর যদি কখনও সিগারেট মুখে নাও তাহলে কিন্তু এটা পাবে না।
--- এই মিষ্টির জন্যে আমি সবকিছু ছাড়তে পারি।
মায়া এবার আমাকে ওর মায়া দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।আমিও মায়ার বাধনে আটকে গেলাম।আর মায়ার কানে কানে বললাম,
অবশেষে মায়ার মায়ায় বেধেই গেলাম।বেশ শক্ত ভাবেই...
.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...