শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১৮

৪র্থ স্থান অধিকারীর ছোটগল্প

ফারাবী ইসলাম আবীর

লাল জলের পিপাসা

: 'বাবু! বলো, আম্মু।' আবরারকে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে বলল আনীলা।
: 'না বাবু। আব্বু ডাকো, আব্বু!' আবরারের নাকে আঙুল ছুঁইয়ে বললাম আমি।

: 'হুহ, আমার বাবু প্রথমে আম্মু-ই বলবে। তাইনা বাবু!' আনীলার কণ্ঠে উচ্ছ্বাস।
: 'উঁহু, ও প্রথমে আব্বু বলবে, আব্বু।' বললাম আমি।
: 'ওই, ওইতো, বেশি বুইঝো না তো! যাও যাও, অফিসে যাও। বাবু কার নাম আগে নিবে, সেটা সময় হলেই দেখা যাবে।' আমাকে চিমটি কেটে বলল আনীলা।

- 'ভ্যাঁ! (মুখ ভেংচানোর ভঙ্গি)। চলে যাচ্ছি আমি।' টাইয়ের নট ঠিক করতে করতে বললাম।
ঝগড়া করছিলাম আনীলার সাথে। আনীলা আমার স্ত্রী। ৪ বছর বয়স গড়ালো আমাদের সংসারের। খুনসুটি, ঝগড়া, ভালোবাসা নিয়ে বেশ ভালোই থাকি আমরা। তারপর  আমাদের ঘরে ভালোবাসায় আরও রঙ ছিটালো আমাদের সন্তান 'আবরার'।
আবরারের বয়স ২ বছর হতে চললো। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, সে এখনও একটা শব্দও কথা বলেনি। আনীলা আবেগভরা উত্তেজনায় তার প্রথম ধ্বনির প্রহর গুনছে, আবরারের মুখ ফুটলেই প্রথমে 'আম্মু' ডাকবে। কিন্তু ছেলে তো আমার! আমি জানি, ওর প্রথম ডাকটা হবে 'আব্বু'। একদিন হঠাৎ অফিস টাইমে আনীলার ফোন এলো,
: হ্যালো!
: আবীর কই তুমি? এক্ষুণি বাসায় এসো। (কণ্ঠে জড়িয়ে আছে শ্বাস আটকানো ভয়।)
: কী হয়েছে আনীলা? হ্যালো! হ্যালো!
কী হলো আনীলার! খুব ঘাবড়ে গেলাম। তাড়াহুড়ো করে দৌড়ে ছুটলাম বাসায়। নক করতেই আনীলা দরজা খুলে দিল। ভয়ে ওর মুখ নীল হয়ে গেছে।
: কী হয়েছে তোমার? এতো কাঁপছো কেন?!
: আবীর, আ... আবীর... আবরার!...।
আনীলা তোতলাচ্ছে। আমার উদ্বেগ বেড়ে গেল।
: আবরার কী? কী হয়েছে ওর?
: আবীর আ... আ... আমি প্রতিদিনের মতো আবরারকে ক... কথা শেখাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি ওর চে... চে... চেহারায় রক্তিম আভা দেখা দিয়েছে। চো... চোখ দুটো ভয়ঙ্কর রকমের ব... বড় হয়ে গেল। এরপর আমার গ... গ.... গলা চেপে ধরে চেঁচিয়ে বললো, 'রক্ত খাবো, রক্ত। আমাকে রক্ত দে'।
আমি (আবির) অবাক হইনি। কারণ, আবরার বড় হচ্ছে। ওর ক্ষুধা বাড়ছে। আমাদের আর এখানে থাকলে চলবে না। কেউ জানার আগে ছেলেকে নিয়ে আজ রাতেই শহর ত্যাগ করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...