শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮

নুডলস রান্না

কাপড় ইস্ত্রি করতে  গিয়েছিলাম দোকানে। দোকানদার খুব সৌখিন টাইপের মানুষ। নিজ হাতে পাক করে খান। তিনবেলার খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও মাঝেমাঝেই বিভিন্নরকম খাবারের আয়োজন করেন। নুডলস,সেমাই,ফিন্নিসহ নানান জাতের আইটেম থাকে সেই আয়োজনে। আমি মাঝেমাঝেই সেখানে যাই। তার সমস্ত আয়োজন মন ভরে দেখি। তারপর একগাদা লালা নিয়ে গন্তব্যে ফিরে আসি। যেদিন নুডলস পাকানো হয়, সেদিন আর লালা নিয়ে ফিরতে পারি না।
লালার আধিপত্যের কাছে হার মানতে হয়।
.
শেষমেষ একদিন দোকানীকে গিয়ে বলেই ফেললাম,ভাই! আমি আপনার সাথে শরিক হতে চাই। নুডলসের টাকা আমি দেবো। পাকশাকও আমি করে দেবো। আপনি শুধু আমাকে সঙ্গে রাখবেন আর হালকা পাতলা দিকনির্দেশনা দেবেন। দোকানি একটু আমতা আমতা করে শেষে রাজি হয়ে গেলো। আমি পাশের দোকান থেকে এক প্যাকেট কোকোলা সজিব নুডলস কিনে  দোকানদারের সামনে গিয়ে বসলাম। দোকানদার আমাকে পাকের যাবতীয়  নিয়মাবলী আদ্যপান্ত সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো। এমন বিশদ বিবরণ দিলো যে,আমি হাঁক দিয়ে বলে ওঠলাম, "আরে ভাই,এই ব্যাপার! আমি তো ভাবলাম কী না কী! আপনি নিশ্চিন্তে গিয়ে কাপড় লন্ড্রি করেন, আমি এদিকটা সামাল দিচ্ছি। আজকে খেয়ে দেখবেন,নুডলসের স্বাদ কতো প্রকার ও কী কী।" দোকানি আমার উৎসাহে বেশ স্বস্থি পেলো। এশার নামাজ দাঁড়াতে তখন অল্প সময় বাকি । দোকানি আমাকে রেখে মোটামুটি নিশ্চিন্ত মনেই নামাজে চলে গেলো। আমি রয়ে গেলাম দোকানে। রান্নার সুবিধার্থে দোকানিকে বলে দোকানের হুড ফেলে  দিলাম। তারপর সবকিছু সুন্দর ভাবে গোছগাছ করে প্রয়োজনীয় মশলাপাতি মিশিয়ে কড়াইটা ষ্টোভে চাপিয়ে দিলাম।
দোকান ঘরটা খুব একটা বড়ো না। একটা খাট, দু'টা চেয়ার আর সামান্য কিছু মালপত্র রাখা ঘরটাতে। ছোট্ট একটা ওয়ারড্রবও লক্ষ করলাম। সবকিছু বেশ গোছানো। সবচেয়ে বেশি গোছানো তার খাটটা। মোটা জাজিমের উপর সুন্দর ডিজাইনের পরিচ্ছন্ন একটা বিছানারচাদর বিছিয়ে রেখেছে। দেখলেই শুতে মন চায়। আমারও  মন চাইলো। আমি একরকম ধপাশ করে খাটে গিয়ে পড়লাম। জাজিমটা এতো নরম যে,মনে হলো ভিতরে ঢুকে যাবো। সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় মিনিট ওভাবে শুয়ে থাকলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই। হঠাৎ প্রচন্ড আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে  গেলো। জেগে দেখি দোকানদার  ক্রমাগত দরজা পিটাচ্ছে। এদিকে নুডলস পুড়ে কড়াই থেকে উদ্গত ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধে সারাঘর একাকার । আমার তো আক্কেল গুড়ুম অবস্হা। কড়াই তুলবো নাকি দোকানের হুড তুলবো,বুঝতে পারছিলাম না। হন্তদন্ত হয়ে ষ্টোভটা কোনো রকম বন্ধ করে দোকানের হুড তুলে দিলাম। মুখে যথাসম্ভব সাভাবিক ভাব রেখে বললাম, চলে আসছেন তাহলে! আমারও পাকশাক শেষ। দেখেন তো কেমন হলো। দোকানী কিছু বলতে গিয়ে হঠাৎ থেমে  ভেতরে চলে গেলো। আমি আর পিছনে তাকালাম না। আস্তে করে দোকান থেকে বেরিয়ে চম্পট দিলাম। আমাকে আর কে পায়! এক দৌড়ে ভাগলপুর। আত্মা শুকিয়ে প্রায় নুডলসের মতো হয়ে গেলো।
.
সেই যে এলাম ঐ দোকান থেকে, তার পরবর্তী পাঁচমাস আর ঐ এলাকার দিকেই যাইনি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...