রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮

ভালবাসা

শ্বশুর বাড়ির কেউ যদি কোন কষ্ট দেয় বিশেষ করে জীবনসঙ্গী ৷
সেই কষ্টটা সামলানো একটা মেয়ের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়৷
সত্যি  ক্ষণে ক্ষণে কেবল সেই দিনটির কথা মনে পড়ে যায়৷
বিয়ের দিন!

কত স্বপ্ন কত আশা কত ভালোবাসা সব উজাড় করে আব্বু  সেদিন  একটা অচেনা অজানা লোকের হাতে তুলে দিয়েছিল  তার কলিজার টুকরাকে ৷
বারবার মনে পড়ে যায় আব্বুর সেদিনকার নোনাজলে ভাসানো আঁখিযুগলের কথা ৷  কোন সে মায়া কোন সে টান যার জন্য আব্বু  এভাবে কেঁদেছিলেন?
আব্বুর বুকে মাথা রেখে শক্ত করে খুব শক্ত করে অনেক্ষন আটকে রেখেছিলাম নিজেকে ৷ এত শান্তি আর কোনদিন পাইনি ৷ আচ্ছা আর কোনদিন পাবোতো? এতোদিন কোথায় ছিলো এই শান্তি  ? পাইনি কেন? সেদিন  যেন একটা স্নেহনীড় পেয়েছিলাম আব্বুর বুকে ৷খানিক পর কোন অদৃশ্য শক্তি আলাদা করে দিলো আমার সেই স্নেহ কুটির থেকে৷
আম্মুর কথা মনে পড়লে  কলিজাটা দুমড়ে মুচড়ে কুকিয়ে ওঠে ৷ আহা  মুখে আঁচল গুঁজে  আমায় জড়িয়ে ধরে কি কান্নাটাই না করেছিলেন সেদিন ৷ আর আমি কেমন পাগলের মতো হাউমাউ করে উঠেছিলাম ৷
কতদিন পর আম্মুকে এভাবে ধরেছি ৷মায়ের বুকের পরম প্রশান্তি এতোদিন কেন পাইনি ৷কোথায় ছিল এই সুখ ৷ আমি কি করবো এখন  কি পাগল হয়ে যাবো?
একমাত্র ভাই,  যার হৃদয়টা পাথরের মতো  মনে করতাম ৷ তাকেও সেদিন  দেখেছিলাম চশমা ফাঁক করে চোখ থেকে কি যেন লুকুবার আপ্রান চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা ৷ বারবার তা দিবালোকের ন্যায় প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে ৷
আচ্ছা সেও তাহলে তার বোনের বিরহ বেদনায় কাঁদছে! বারবার সেই লোনা জল মুছে নিজেকে শক্ত পাথর প্রমানিত করার মিছে প্রবোধ জানান দিচ্ছে!
তুই কাঁদতেও পারিস?এই প্রথম দেখলাম ৷ এখনো তোর কান্নাটাই আমায় সবচে বেশি যাতনা দেয় রে  ৷ আমি ভাবতেও পারিনি তুই আমার জন্য এভাবে কাঁদবি! সেদিন তোর কান্না  আমি কোনভাবেই মানতে পারছিলামনা রে! তোর এই মায়াবী কান্না  দেখে সেদিন  নিজেকে সামলে রাখা কঠিন থেকে কঠিনতর ছিলো ৷
মনে পড়ে আমাকে বিদায় দিয়ে সবাই কেমন যেন করছিলো সেদিন! মন যেন বাধা মানতে চাইছিলোনা ৷ বারবার পিছুটান ৷  কিসের মায়া, কিসের টান ?আমি কে?
সব কিছু কেমন গোলমাল হয়ে গিয়েছিলো সেদিন ৷নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম ৷
আচ্ছা সবাই সেদিন কেন কেঁদেছিলো!
তারা কি জানতো আমায় ওরা কষ্ট দিবে নাকি সুখে রাখবে?
আরো কত হাজার চিন্তা মাথায় এসে ভর করে আর কষ্টে ভেতরটা জ্বলন্ত আঙ্গারে পরিণত হয় যখন সেই প্রিয় মানুষটা সামান্যতম কষ্টও দেয় ৷
মন যেন মানতে চায়না ৷
এত কষ্ট এত ত্যাগ!  এত তিতীক্ষা কার জন্য?কিসের জন্য?  সে কি বুঝেনা?
নাকি বুঝেও না বুঝার ভাণ ৷
আব্বু কি এ জন্যই তার কাছে আমায় সঁপে দিয়েছিলেন? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই কি সে সবার কাছ থেকে আমায় ছিনিয়ে এনেছে? আমি হারা বেদনায় সবার কান্নামুখর চেহারাটা তখন বারবার হৃদয়ের আয়নায় ভেসে ওঠে৷
মন চায় কারো স্বান্তনা পেতে ৷ মাথায় একটা শীতল পরশ বুলানো হাত পেতে ৷  চেয়েও যদি না পাই তখন  নোনা জলে ভেসে যায় চোখমুখ সহ বুক৷ আহা এ কষ্ট দেখার বুঝি কেউ নেই! !
এ জাতীয় আরো অনেক অনেক চিন্তা এসে মনকে কষ্ট ভরাক্রান্ত করে তোলে ৷ নিদের অলক্ষ্যেই মন অনেক কষ্ট পেতে থাকে ৷ রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় ৷ খানাপিনা কিছুতেই মন বসেনা ৷
সব ঠিকঠাক হওয়ার আগ পর্যন্ত মনে কেবল একটাই প্রশ্ন জাগে, কেন  এমন হলো?  কেন এমন করলো? আব্বু  আম্মু সবাই কেন এতো কাঁদলো??  কেন আমাকে বিয়ে দিলো?  না দিলে কি হতোনা?

তাই বলছি,
ভাইসব!  মেয়েদের মন খুবই  নাজুক এবং কোমল৷
একটুখানি স্পর্শ /আঘাত লাগলেই দাগ লেগে যায়৷ পুরাতন ঘাঁ এর কথাও মনে পড়ে যায় ৷ এরা স্বভাবতই এমন ৷ মেনে নিতেই হবে আপনাকে৷
আপনার   জীবনসঙ্গীকে কষ্ট দিবেননা  ৷ বরং যে কোন সমস্যায় বুঝাবেন ৷ যতো সুন্দরভাবে বোঝানো যায় ততোটা সুন্দরভাবেই বোঝাবেন৷
হ্যা একটুখানি মান অভিমান করতেই পারে তার জন্যে আপনিও বেঁকে যাবেননা ৷ আপনার স্নেহ সোহাগ পাবার জন্যই তার এমন করা ৷ আপনাকে সেটা বুঝে নিতে হবে ৷
যদি না বুঝেন তাহলে হাজার চিন্তা হাজার ভাবনা দুনিয়ার কষ্ট এসে ভর করবে তার মাথায় ৷
সেইসবল চিন্তা থেকেই পাগলামী, পাগলামী থেকেই ঝগড়া ৷এটা বহুদূর এগুতে পারে ৷তাই কোনরকম দুশ্চিন্তা তার  মাথায় প্রবেশ করার আগেই সব মিটমাট করি নিন ৷ এতেই মঙ্গল ৷,  এতেই শান্তি৷  মেয়েদের বাঁকা হাড্ডি অনেকেই  বলে,  আপনারটা তো সোজা আপনিই তাহলে আগে আগে ঠিক করে নেন৷ আপনার হাতেই তো সব ৷ আপনার  সাপোর্ট পেলে  সে সব করতে রাজি থাকবে বিশ্বাস করুন! সেটা যতো  কঠিন থেকে কঠিনই হোক না কেন ৷ দরকার কেবল আপনার সাপোর্ট!
একসাথে সারাজীবন থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়েই যেহেতু হাতে হাত রেখে  এক ঘরে আগমন সেহেতু  টুকটাক ঝগড়া ভুল বুঝাবুঝি হতেই পারে ৷তা যেন বহুদূর পর্যন্ত না গড়ায়৷
ব্যক্তিগত  অভিজ্ঞতার আলোকে এর বেশি আর কি-ই বা বলতে পারি৷


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...