রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮

বুকসেলফ

সকাল ৮টা বাজে। হঠাৎ বাবার ডাকে আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো। বাবা ঘরের বাহির থেকে আমায় ডাকছিলো
-খোকা! কোথায় রে তুই? তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠ! দেখ তোর জন্য কী নিয়ে এসেছি!
.
আমি অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ঘরের বাইরে গিয়ে দেখলাম, বাবা ভ্যান গাড়ি করে আমার জন্য একটা বুকসেলফ (বই রাখার তাক) এনেছে। আমি বুকসেলফটা দেখে বেশ খুশি হলাম। আসলে আমি বই পড়তে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমার বেশির ভাগ বইই ঘরে এলোমেলো অবস্হায় ছড়িয়েগছিটিয়ে থাকে। এখন বুকসেলফ আনাতে বইগুলো গুছিয়ে রাখা যাবে।
বুকসেলফটা অনেক বড় ছিলো। অনেকটা আলমারির মতো। অবশ্য বুকসেলফটা দেখতে কিছুটা পুরাতনও ছিলো। বাবা বললেন যে
-বুকসেলফটা একটু পুরাতন বটে। তবে বেশ মজবুত। আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে এটা কিনে এনেছি।
আমি অনেক খুশি হয়ে বাবাকে ধন্যবাদ জানালাম। এরপর বুকসেলফটা বাবা আর আমি দুজনে মিলে ধরে আমার ঘরের এক পাশে এনে রাখলাম।
এরপর সারাদিন বুকসেলফটা পরিষ্কার করে আমার সব বই এটাতে গুছিয়ে রাখলাম। বুকসেলফটাতে একটা আলমারির মতো বড় লকার ছিলো। যেটাতে হয়তো একটা পুরো মানুষ ভালোভাবে ঢুকতে পারবে। সেটাতে আপাতত কিছু রাখিনি।
সারাদিন এইসব কাজ করে রাতে খুব ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
রাত তখন আনুমানিক ১টা বাজে। হঠাৎ কারো আমার ঘরের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঘুমটা ভেঙে গেলো। আমি চোখ খুলে দেখলাম আমার বাবা এসেছে। কিন্তু বাবা এতোরাতে আমার ঘরে কেনো এসেছে! তারপর আবার বাবার পরণে ছিলো অদ্ভুত রকমের একটা সাদা পোশাক। অনেকটা কাফনের কাপড়ের মতো দেখতে। বাবাকে দেখে আমার কিছুটা ভয় করছিলো, তাই আমি আর কোন শব্দ করলাম না। এরপর বাবা ধীরে ধীরে আমার ঘরে প্রবেশ করে সেই বুকসেলফটার কাছে গেলো। এরপর সেই বুকসেলফটার যেই একটা বড় লকার ছিলো সেটা খুলে বাবা সেটার ভেতরে ঢুকে ভেতর থেকে লকারটা আটকে দেয়। আমি এটা দেখে অবাক হয়ে শোয়া থেকে বসে পড়ি। ভাবলাম, বাবা এতোরাতে এই অদ্ভুত পোশাক পরে সেলফের লকারের ভেতর গিয়ে কী করছে!! আমি ভয়ে ভয়ে বিছানা থেকে উঠে ধীরে ধীরে সেই সেলফের লকার পর্যন্ত গেলাম। লকারটার দরজা আস্তে করে টান দিতেই খুলে গেলো। দেখলাম বাবা উল্টো দিকে ঘুরে অদ্ভুতভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বাবাকে প্রশ্ন করলাম:
-বাবা! তুমি এতো রাতে লকারের ভেতর কি করছো?!
কিন্তু বাবা কোন উত্তর দিলো না। বাবা আমার দিকে তাকালোও না। উল্টো দিকে ঘুরে কেমন অদ্ভুতভাবে হাসতে শুরু করলো।
আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। এরপর একবার বাবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকিয়ে
দেখার চেষ্টা করলাম। এরপর যা দেখলাম তাতে আমার শরীরের রক্ত সব ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। বাবার পা মেঝে থেকে এক ফুট উপরে ছিলো।
আমি এটা দেখে আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই। এরপর বাবা ভয়ংকর ভাবে হাসতে শুরু করেন। আমি ভয়ে চিৎকার করতে থাকি
-মা! মা! কোথায় তুমি ?!! তাড়াতাড়ি এখানে এসো!
এরপরেই পাশের ঘর থেকে বাবা আর মা দ্রুত আমার ঘরে চলে আসলো। বাবা এসেই আমাকে প্রশ্ন করলেন
-কী হয়েছে খোকা?! চেচাচ্ছিস কেনো?
আমি বাবাকে পাশের ঘর থেকে আসতে দেখে বেশ অবাক হলাম। বাবা পাশের ঘর থেকে কিভাবে আসলো!! আমি না বাবাকে মাত্রই লকারের ভেতর দেখলাম!! এরপর বাবাকে বললাম
-বাবা! তোমার মতো দেখতে কেউ একজন একটু আগে সেলফের লকারের ভেতর ঢুকেছে।
এরপর বাবাকে লোকটাকে দেখাতে যেই সেলফের লকারটা খুললাম দেখলাম লকারের ভেতর কেউ নেই! আমি অবাক হয়ে গেলাম! লোকটা এতো দ্রুত উধাও হয়ে গেলো কীভাবে?! এরপর বাবা-মা বললেন যে, আমি হয়তো কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু আমি জানি আমি কোন দুঃস্বপ্ন দেখিনি। আমি স্পষ্ট বাবার মতো দেখতে লোকটাকে সেলফের লকারে ঢুকতে দেখেছিলাম। এরপর বাবা-মা আমাকে ঘুমাতে বলে আবার পাশের রুমে চলে গেলেন। আমি খুব অবাক হয়ে বসে রইলাম। তাহলে কি এইসব আমার কল্পনা ছিলো!! এরপর আর কিছু না ভেবে বিছানায় গেলাম ঘুমাতে। হঠাৎ আমার মনে হলো যে আমার ঘরের জানালার পর্দার পেছনে সাদা কাপড় পরা কেউ একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি খুব অবাক হয়ে আবার ভয়ে ভয়ে জানালার পর্দার কাছে গেলাম।
যেই জানালার পর্দাটা সরাতে যাবো, হঠাৎ করে আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো। আমি আমার পুরো ঘরের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। এখানে কোন বুকসেলফ নেই! তার মানে বাবা কোন বুকসেলফ আনেনি! আমি এতক্ষণ যা দেখছিলাম পুরোটাই একটা স্বপ্ন ছিলো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সকাল ৮ টা বাজে। হঠাৎ ঘরের বাহিরে থেকে বাবার ডাক শুনলাম
-খোকা কোথায় রে তুই? তারাতারি ঘুম থেকে ওঠ! দেখ তোর জন্য কি নিয়ে এসেছি!...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...