শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮

জীবন যেমন (চতুর্থ পর্ব)



এর মাঝে ছোট খালারা আবার বদলী হয়ে রাঙ্গামাটি চলে গেল। আমরা একা হয়ে গেলাম। তাই কলাবাগান হতে আগারগাঁও সরকারী কলোনিতে সাবলেটে বাসা নিলাম। বাসাটা দোতালা, নিচে বাড়িওয়ালা উপরে আমরা। রান্না ঘর নিচে ওয়াস রুম আর লেট্রিন উপরে, আলাদা আলাদা। বাড়িওয়ালারা শুধু লেট্রিন ব্যাবহার করত।  ওয়াস রুম আমারা ব্যবহার করতাম। রান্না ঘরের পিছনে একচিলতে উঠানে তারা ওয়াস রুম করে নিয়েছে। একি রান্না ঘরে দুই ফ্যেমেলির রান্না হত। রান্নার পর সব উপরে নিয়ে আসতে হতো।
দিনগুলি কেটে যাচ্ছিল কোন ভাবে। আব্বা অফিসের কোন কাজে ঢাকায় এলে আমাদের দেখতে আসতেন। যখন জানতে পারলেন আমাদের আর একজন বাবু আসছে আব্বা খুব রাগ করে ছিলেন, 'শিক্ষিত জামাই তবুও কেন ঘনঘন বাচ্চা নিচ্ছে?'
আমিও খুব লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম। তাই এইবার ডেলিভারির সময় আব্বার বাসায় যাব না সেই সিন্ধান্ত নিলাম। আব্বা অনেক খবর পাঠালেন চিটাগাং যাওয়ার জন্য।  শেষে একদিন মা এলেন আমার বাসায় সাথে বড়দা। আমি সামনে যেতে পারছি না এই অবস্থায়। আমাদের এই এক রুমের বাসাকে মাঝখানে পর্দা, মিটসেফ ও ড্রয়ার দিয়ে দুই ভাগ করেছি।একদিকে সিঙ্গেল খাট ও বাসার চেয়ার অন্যদিকে ডবল খাট ও ছোট একটা টেবিল। রুমের দুই দিকে দুইটা দরজা ছিল তাই রক্ষা বড়দার সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে না। মিটসেফের এপাস থেকে আমি কথা বলছি শুধু মুখটা দেখা যাচ্ছে আমার। বড়দা ছিলেন অসুস্ত  আমি আম্মা কে বললাম, 'মা আপনি উনাকে এই শরীর নিয়ে কেন আনলেন?' 'আমি তোর এখানে আসব শুনে চলে এসেছ।  কি করে না করি বলত।' যত ভাইয়ের ছেলেরা আছে সবার চেয়ে উনাকেই আম্মা বেশী স্নেহ করতেন। বড়দা সিঙ্গেল খাটে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। এই ফাঁকে আমি রান্না সেরে নিলাম। তখন ছিল রমজান মাস, সেদিন ছিল তের রোজা। আমি আম্মা দুজনেই রোজা।রান্না শেষ হতেই মেয়েদের খেতে দিলাম।আমার বড় মেয়ে রুমির তখন চার বৎসর চলছে, আমার সব কাজেই সে সাহায্য করে। ঘুম ভাংলে বড়দা কে খেতে দিলাম। ছোট্ট রুমি সেন্টার টেবিলে  সবকিছু একটা একটা নিয়ে রাখল আর আম্মা সার্ভ করে বড়দাকে খাওয়াল।
আমাদের দুজনার মাঝে শব্দরা উচ্চারিত হয়ে কোন কথামালা তৈরি করেনি। নীরব ভাষায় দুজনে চোখে চোখে চেয়ে কথা বলেছিলাম। সকাল থেকেই আমার অল্পঅল্প পেইন হচ্ছিল, আমি বুঝতে পারছিলাম আজ রাতেই বাবুটা আসবে। আম্মা জানতে চাইল,' তোর ডেট কবে?' আমি আরো সাত দিন বাড়িয়ে বললাম। মার মন তো তাই সন্দেহভরা চোখে আমার দিকে তাকাল,  'তোর কি অসুস্ত লাগছে?'
' না মা আমি ভাল আছি। ' আমাকে দেখে কেও বুঝবেনা আমি যন্ত্রনার মধ্যেদিয়ে যাচ্ছি। আমি একদম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছি।
' তোর খারাপ লাগলে বল আমি থেকে যাই।'
আমি জানি আম্মা থাকলে অনেক ঝামেলা হবে। আমাদের পকেটের খবর তো উনি জানেন না। মেয়ের চিকিৎসায় সামান্য এদিক উদিক হলে জামাইর বারটা বাজিয়ে দেবেন। জমিদারের মেয়ে আমার আম্মা, অভাব কি বা কম খরচ করা জানতেন না।  কারো  কোন সমস্যায় নিজের গয়না খুলে দিয়েদিতেন। সে আর এক গল্প অন্যকোন দিন বলব।
আমার কর্তা অফিস থেকে ফিরলেন। আম্মা ও বড়দাকে দেখে খুব খুশি হলেন। আমি আসরের পর কর্তাকে দিয়ে গাড়ি আনিয়ে আম্মা ও বড়দাকে জোর করে পাঠিয়ে দিলাম। কারন আমি জানি হাতে মাত্র আর কয়েক ঘন্টা টাইম।  ইফতারের সময় পাব কিনা তাই ভাবছি। তেরটা রোজা যেন পুরা হয় সেটাই আল্লার কাছে চাচ্ছিলাম।  তাই আম্মাকে ইফতার না করিয়ে বড়দার শরীর অসুস্থ এই বাহানায় বিদায় করলাম।
  আমার কর্তা আমার অবস্তা দেখে, ' তোমার কি খুব খারাপ লাগছে?'
' ইফতারের পরপরই মনে হয় বাবুটা আসবে'
' তুমি আম্মাকে পাঠিয়ে দিলে কেন?'
  ' আমি চাইছি না এই সময় মা এখানে থাক। আমাদের আর্থিক অবস্তা আমি উনাকে জানাতে চাই না। আপনি আপনার শশুর বাড়িতে ছোট হোন তা আমার বরদাস্ত হবে না তাই।'
আমার কর্তা আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
( চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...