ওবায়েদ কাসেমী
ভর দুপুর! চৈত্র মাসের খাঁ খাঁ রোদে তপ্ত ভূমি। চারদিকে বইছে লু-হাওয়া। শরীরে কাপড় আবৃত থাকাবস্থায়ও উত্তপ্ত বাতাসের লেলিহান শিখা পুরিয়ে ফেলছে লোমরাজি। পৃথিবীর ভূপিঠ আগুনে জ্বলে ভস্ম প্রায়। সবাই যে যার মতো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
শুধু রাজু! জনমানব শূন্য পিচঢালা তাতানো পথে জীর্ণ শীর্ণ পরিধেয় বস্ত্রে,জুতা চপ্পলহীন নাঙ্গা পায়ে,দু চারটি গোলাপ ফুল হাতে ঘুরছে আর বলছে, 'ভাইয়া একটা ফুল নিবেন? আপা একটা ফুল নিবেন? মাত্র পাঁচ ট্যাকা।'
দীর্ঘক্ষণ লক্ষ্য করছিলাম। তার সামনে কেউ নেই। তবুও সে বার বার একই বুলি আওরাচ্ছে। ধীরপায়ে এগুতে লাগলাম। আমাকে দেখতেই একদৌড়ে চলে এলো নিকটে। আবারও ঐ সেই বুলি, 'ভাইয়া একটা ফুল নিবেন? মাত্র পাঁচ ট্যাকা।'
আমি অবাক হয়ে দেখছি ছেলেটিকে। বয়স কতই হবে বড়জোর আট নয় বছর।গায়ের রঙ শ্যমলা।এলোমেলো চুল।অসহায় চাহনি।
জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কি? সে উত্তর দিল,'রাজু।'
তোমার বাসা কোথায়?
'কলোনীতে থাকি।'
তোমার পরিবারে কে কে আছে? 'খালি মা আছে আর কেউ নাই।' তোমার মা কি করে?
'মার অসুখ উঠবার, হাটপার পারেনা।হাত পাও ব্যাকা অসুখ।'
আমি বুঝলাম প্যারালাইসিস।
তোমার মাকে ডাক্তার দেখাওনা?
'না ট্যোকা পামু কোথায় ! পুতিদিন ফুল বেইচা পঞ্চাশ ষাট ট্যাকা কামাই করি সেডা দিয়া চাউল ডাল কিনা লাগে।ভাইয়া আমার মা বেশিদিন বাচবোনা।'
তুমি কিভাবে জানলে?
'আমার মা-ই কইছে।'
আর কি কি বলে তোমার মা ?
'কয় তুই লেখা পড়া কর। আমার জন্যি খাওন আনা লাগবো না। ফুলবেচা ট্যাকা দিয়া তুই স্কুলে ভর্তি হ। মানসের মতো মানুষ হ।'
তুমি কি বলো?
'আমি কই আমার পড়া লাগবো না। যে কয়দিন পারি তোমারে খাওয়ামু।'
----------কথা গুলো শুনতে শুনতে আঁখিযুগল ভারি হয়ে এলো। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, হায়! আজ মনুষ্যত্ব কোথায়। রাজুর মতো হাজারো কচি বাচ্চা দু মুঠো আহারের তরে বিলিয়ে দিচ্ছে প্রাণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন