শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮

জীবন যেমন (প্রথম পর্ব)



     জীবনটা ছোট জীবনের চলার পথটা অনেক অনেক দীর্ঘ। চলার পথের নানা বাঁকে নানান মানুষের সাথে পরিচয়। কেউ বন্ধু কেউ শত্রু। জীবনটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির পাল্লাটাই ভারি। লেখা-পড়া শেষ করে হতে চেয়েছিলাম বিচারক; হয়েছি গৃহিণী। এটাই হয়তো কপালে লিখা ছিল, পড়াটা ও শেষকরা হলো না। বিয়ের প্রথম মাসেই কন্সিব হয়ে গেল,  পুরো ছয়মাস অসুস্ত ছিলাম। যেমন বমি তেমন জ্বর। আমার কর্তা উনার সর্বউচ্চ চেষ্টা দিয়ে আমার যত্ন করেছেন। উনার কর্মস্থল পাবনার টেবনিয়ার হর্টিকাল্চার ফার্মে বিয়ের কুড়িদিনের মাথায় চিটাগাং থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। না জানতাম রান্নাবান্না না জানতাম অন্যকিছু।  বাবার হোটেলে খেয়েছি আর লেখাপড়া করেছি। আমি আব্বার বাধ্য মেয়ে ছিলাম তাই আব্বা আমাকে খুব পছন্দ করতেন। কারো সাথে প্রেম করব হুটকরে বিয়ে করব কখনো ভুলেও চিন্তা করিনি। তাই সেই ভাবে প্রেম করা হয় নি। একটাই ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করার তা আর হল কই।

      প্রেম এসেছিল আমিই বুঝিনি। যখন বুঝেছি তখন সাতটি বসন্ত বিদায় নিয়েছ জীবন হতে,দুই তনয়া আমার কোলে। পরে শুনেছিলাম আমার যে দিন বিয়ে হয় সে দিন উনাকে I.C.U তে নিতে হয়েছে। উনার যে ভাইটা আমার বয়সী মইনু তার নাম সেই বলেছিল আমাকে একদিন, " তুমি বিয়ে করে ভালই আছ কিন্তু দাদাকে সুস্ত করতে আমাদের বারটা বেজেগেছে। ওনাকে ইন্ডিয়ায় নিয়ে চিকৎসা করাতে হয়েছে। আমরা উনার ছোটরা বিয়ে করে ফেলেছি কিন্তু উনাকে বিয়ে করানোর জন্য রাজি করাতে পারছি না। আম্মা ও এই নিয়ে অশান্তিতে আছেন। যদি পার আপু উনাকে বিয়ের জন্য রাজি করাও।" আমি বললাম উনি এখন কোথায় আছে? মইনু জানাল," তুমি মেজবানে এসেছ সেই খবরটা আমি বড়দা কে পাঠিয়েছি, আগামি কালই হয়তো চলে আসবে বাড়িতে।
       বলাই হয়নি বৎসরের একদিন আমাদের পারিবারিক মেজবান হয়। মিয়াজী পরিবারের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সবাই গ্রামের বাড়িতে এই মেজবানে মিলিত হয়। মরহুম ও জীবিত সবার মঙ্গল কামনা করে দুই/চার গ্রামের মানুষদের খাওয়ানো হয়। অনেক গরু, মহিষ, ছাগল জেবহ দেওয়া তা সারা রাত রান্না পরদিন ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ার সাথেসাথে খাওয়া শুরু; সে এক এলাহি কান্ড। আমাদের জন্য সবার বাড়িতে বাড়িতে মাংস চলে আসে।
     মইনু আমাকে আগেই জানিয়ে ছিল কয়টার সময় কোথায় থাকবে, তাই সেই সময় করে বের হলাম। ওনাদের সাথে নদীর ধারে পথেই দেখা হল। মইনু আমি একটু আসি বলে কেটে পড়ল। আমরা দুজন নদীর পাড়ে গাছের ছায়ায় বসে পড়লাম। তখনো বুঝিনি আমি উনার প্রেমে পড়ে গেছি। পরিবারে উনি আমাদের সবার বড় তাই সবাই বড়দা বলেই ডাকতাম ( আমার আম্মার জেঠাত ভাইয়ের ছেলে)। এটাওটা টুকটাক কথা বলতে বলতে জানতে চাইলাম
আমি:- বড়দা আপনার ছোটরা বিয়ে করে ছেলের বাবা হয়ে গেল আর আপনি এখনো বিয়ে করছেন না?
আমার প্রশ্নে উনার প্রান খোলা হা হা হা হাসিতে আমার দিকে তাকাল।
আমি:- হাসছেন কেন?  আমি কি হাসির কথা বলেছি।
বড়দা:- কাওকে যে পছন্দ হচ্ছে না, সবকিছুই যে তুমি ময়। একদম তোমার মত যদি কোন রোজী আনতে পার তবে বিয়ে করে নিব।
আমি:- আর একজন রোজী কোথায় পাব?
বড়দা:- তবে তো আর বিয়ে করা হলো না। আমি তোমাকে লেখাপড়াটা শেষ করতে বলেছিলাম, ততদিনে আমি স্টাবলিষ্ট হয়ে যেতাম। তুমি তা করতে পারলে না। এখন আর আমার চাওয়া পাওয়া কিছুই নেই।
আমি:- আপনি চেয়েছেন আমি চাইনি, তাই আমাদের চাওয়া মিলেনি। আমার বিয়ে আগেই ঠিকছিল এখন শুধু কবুল বলেছি। আপনি সবি জানেন, তবুও কেন এমন একটা গো ধরে বসে আছেন। আপনার ভাই বোনেরা সবাই আমাকেই দোষী ভাবছে। আমাকে যদি সত্যিই ভালবাসেন তবে সংসারী হোন। আপনার ফেমেলির সবার কটাক্ষ থেকে আমাকে রেহায় দিন।
উনি কিছুসময় আমার দিকে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইলেন।
বড়দা:- আমি বিয়ে করলে যদি তোমার শান্তি হয় তবে কেরব, তখন সইতে পারবে তো।
আমি:- আগে তো বিয়ে করেন ; অন্যকিছু পরে দেখাযাবে।
বড়দা:- ঠিক আছে তোমার কথাই রাখব।
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...