সাইফুল ইসলাম শরিফ
সমস্যার শুরু হয় সেদিন থেকে যেদিন আমার বন্ধু তমালকে নিয়ে গিয়েছিলাম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবর জিয়ারত করতে।
তমাল ঢাকার ছেলে হয়েও এখনো আমাদের
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবর দর্শন করেনি, কথাটা শুনার পরেই আমার মাথাটা গরম হয়ে গেল। সাথে সাথে তমালকে নিয়ে রওনা হলাম।
কবরের পাশে দাড়িয়ে প্রথমে দুজনে মিলে দোয়া করলাম। উক্ত দোয়ার অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে আমার মাঝে কদাচিৎ বড় হুজুর বড় হুজুর ভাব চলে এলো।
দোয়া শেষে কবির কাজী নজরুল ইসলামের বৈচিত্রময় জীবনের উপর একটা আলোচনা সভা হলো। সেই সভার একমাত্র বক্তা ছিলাম আমি আর একমাত্র শ্রোতা ছিল তমাল।
আমি মহা পন্ডিতের মত কবির জীবনের সুখ, দুঃখ, সংগ্রাম, প্রেম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বয়ান করছিলাম আর তমাল মনোযোগী শ্রোতার মত সব শুনছিল। যদিও কবি নজরুলএর জন্ম-মৃত্যু তারিখ বলতে গিয়ে ভুলে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম-মৃত্যু তারিখ বলে ফেলেছিলাম কিন্তু কপাল গুণে তমাল তা বুজতেই পারেনি।
আমার বয়ান যে এতোটা প্রভাব বিস্তার করবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। সেই বয়ান শুনে তমালের উপর রীতিমত নজরুল প্রতিভা ভর করলো। তারপরই শুরু হল অঘটন! এখন তমাল হাটতে, চলতে, উঠতে, বসতে সারক্ষন শুধু কবিতা বলে আর কাগজ কলম পেলেই কবিতা লেখে।
সেদিন ক্লাসে ম্যাডাম লেকচার দিচ্ছিলেন আর তমাল ম্যাডামএর দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ ম্যাডাম চিৎকার করে বললেন "এই ছেলে তুমি আমার দিকে হা করে চেয়ে আছ কেন? "
তমাল দাঁড়িয়ে ম্যাডামের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল "তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়া
সেকি মোর অপরাধ? "
ম্যাডাম বললেন "আমি তোমার টিচার, টিচারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জাননা? "
তমাল বলল " মোর প্রিয়া হবে এস রানী
দেব খোঁপায় তারার ফুল। "
ম্যাডাম রাগে গড় গড় করতে করতে বিভাগীয় প্রধান তোফায়েল স্যারের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানালেন।
তোফায়েল স্যার তমালকে ডেকে নিয়ে বললেন "এটা ইউনিভার্সিটি, এখানে নিয়মকানুন আছে, তুমি যা ইচ্ছে তাই করতে পার না। "
তমাল বলল
"আমি জানিনা তো কোন আইন কানুন
মানিনা তো কোন বাধা,
তবুও আমায় শাসন করেন
আপনি একটা গাধা! "
সাথে সাথে তোফায়েল স্যার ফোন করলেন তমালের বাবার কাছে।
বিকেলে তমাল বাসায় ফিরতেই তার বাবার হুঙ্কার -
"তমাল এদিকে আয়। "
তমাল এগিয়ে গেল। তখনো সে মৃদু স্বরে কবিতা আবৃত্তি করছে। তমালএর বাবা বললেন "কিরে তুই নাকি মস্ত বড় কবি হয়েগেছিস? যেখানে সেখানে কবিতা আবৃত্তি বেড়াস? "
তমাল বলল
"ভাইরে,
এই সমাজে কবি দের
কোন মূল্য নাইরে। "
তমালএর বাবা -"হারামজাদা, নিজের বাবাকে ভাই বলছিস! বলেই তমালের কান টা ধরে গালের মাঝে পাঁচ আঙ্গুলের কারুকার্য করে দিল।
তমাল বলল
"ভয় করিনা, ভয় করিনা
জুলুম অত্যাচার
গাল টা আমার পেতে দিলাম
মারবি কত মার। "
তারপর ধপাস ধপাস আরো দুটি শৈল্পিক থাপ্পড়।
দু'দিন ধরে তমালের দেখা নেই তাই ওকে দেখতে ওর বাসায় গেলাম।
গিয়ে দেখি তমালএর বাবা তমালকে ঘরে তালা মেরে রেখেছে। তমাল ভেতর থেকে দরজায় লাঁথি মারছে আর বলছে
"লাথি মার, ভাঙ্গরে তালা!
যত সব বন্দি শালায় আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা... "

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন