শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭

বিদায় দুহাজার সতেরো

আরিফ

বাড়ির আঙ্গিনায় বসে নীরবে ধুলোবালির সাথে খেলেখেলে শিশুকালের প্রথম অধ্যায়টা যে কিভাবে পার করেছিলাম তা এখন আর তেমন মনে নেই। যতদূর মনে পড়ছে, একদিন মায়ের ডাকে কাছে গেলে হাত-মুখ ধুইয়ে দিয়ে কপালে কাজলের একটা টিপ এঁকে দিয়েছিলেন মাতৃমমতায়। প্রতিদিনই দিতেন। সেদিন সকাল সকাল দিচ্ছেন দেখেই বুঝে নিয়েছিলাম কোথাও যাচ্ছি। হ্যাঁ, ঐ দিনই ছিল পাঠশালার সাথে প্রথম মোলাকাত। পরদিন নতুন বই পেলাম। পেলাম ধুলো উড়োনির নতুন অনেক সাথীও। সেই তখন থেকেই কালো অক্ষর আর কাগজ-কলমের সাথেও পরিচয় হল। বাড়িতে এসে অবুঝ হৃদয়ে  বইয়ের ছবিগুলোর সাথে কতরকম অস্পষ্ট গল্প জমাতাম। মা'ও আমার সাথে সাথে বইয়ের পাতায় আঁকা ফটোগুলো মুগ্ধ হয়ে হয়ে দেখতেন আর প্রত্যেকটা ফটো নিয়ে একেকটা গল্প পাততেন। বাবা-মা বা পরিবারের কেউ বর্ণমালার সাথে পরিচিত  ছিলেন না। এভাবেই বছর শেষ হত। মা'কে নিয়ে বইয়ের ছবি দেখে যাওয়া শিশুটি একদিন পরীক্ষায় প্রথম হয়ে গেল। সেদিন আমার কৃষক বাবা আর মায়ের মুখে যে হাসি দেখেছিলাম তা স্পষ্ট মনে আছে এখনো। 

আমার ফার্স্ট হওয়ার আনন্দগুলো সবচেয়ে বেশি যিনি সেলিব্রেট করতেন তিনি আমার বাবা। রেজাল্ট শুনেই নতুন পাঞ্জাবিটা পড়ে একটা গামছা গলায় ঝুলিয়ে চা খাওয়ার বাহানা ধরে বেশ কয়েকটা চায়ের দোকানে ছেলের রেজাল্ট শুনাতেন আর দোয়া চাইতেন। এভাবে বছর শুরু হয় আবার শেষ হয়। কখনো দুঃখ পাই ফের কোন সুখ এসে মিটিয়ে দেয় দুঃখগুলো, উঠোন জুড়ে হয় রোদের ছড়াছড়ি। প্রতিটি বছরের শেষেই পাওয়া না পাওয়ার সব হিসাব ভুলে গিয়ে নতুন বছরে নতুন স্বপ্নে বুক বাঁধি।
 দেখতে দেখতে চলে গেল দুহাজার  সতেরোও। কিছু বন্ধু ছেড়ে গেছে বিশ্বাসের বোঝা বইতে না পেরে,কিছু নেহাতই হিংসেতে। কিছু হারিয়ে গেছে হার না মানা রেষারেষিতে, তো কিছু একতরফা প্রেম থেকে জন্ম নেওয়া বিষাক্ততায়। কাউকে আমি ঠকিয়েছি, কেউ আমাকে। কারো সাথে নেহাতই অভিমানের সমস্যা, যা আজও একটা ভীষন ঝগড়ার না ফুরানো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অনমনীয় ইগোর চৌকাঠে। সালের শেষ এই দিনটিতে দাঁড়িয়ে আজ বলবো ‘চলে এসো বন্ধু, সব বেদনা ভুলে হৃদয়ের সাথে বাঁধি হৃদয়, হিংসার দেয়াল ভেঙে দিয়ে বানাই পৃথিবী প্রেমের আলয়’.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...