শনিবার, ৯ জুন, ২০১৮

১ম স্থান অধীকারিনীর গল্প

মাহামুদা মিনি

একটি মেয়ের গল্প

আমি এখন প্রথমে ঠিক কোন কাজটা করবো বুঝে উঠতে পারছি না। অবশেষে চেয়ারটা বিছানার কাছে টেনে নিয়ে বসে পড়লাম। হাতে রাফিনের ওষুধের প্রেসক্রিপশন। ওর হার্টের সমস্যা আছে তাই নিয়ম মতো তিনবেলা মেডিসিন খেতে হয়। এই প্রেসক্রিপশনটা প্রায় ছিড়ে গিয়েছে, তাই নতুন একটা কাগজে সব ওষুধের নামগুলো সাজিয়ে লিখছি।কারণ, কাল থেকে তো ওকে ওষুধ খাওয়ার কথা বলে দিতে পারবো না আমি।
একবেলা ওষুধ না খেলে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে।বাসাটাও আজ শেষবারের মতো গুছিয়ে রাখবো। ও অফিস থেকে ফেরার আগেই।

আমি নিজের সম্পর্কে তো কিছুই বললাম না! আমি মৌনতা খন্দকার। তবে রাফিন আমাকে মৌন বলেই ডাকতো। হয়তো আজকের পর আর ডাকবে না। আমার আর রাফিনেরর বিয়ে হয়েছিলো তিনবছর আগে এই মে মাসেই। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! তিনবছর পর সেই মে মাসেই আমি চলে যাচ্ছি রাফির জীবন থেকে।
,
রাফিন আর আমার লাভ ম্যারেজ ছিলো। ওর আর আমার দেখাটাও আর সবার মতো পার্ক বা বাসে বা কলেজ ক্যাম্পাসে হয়নি। আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো আমার ছোটো ফুফু মারা গেলো যেদিন, সেদিন। আমি ফুফুদের বাড়ির একটা রুমে বসে কাঁদছিলাম। হঠাৎ রাফিন ওই রুমে ঢুকে আমাকে দেখে থমকে দাঁড়ালো। আমি তাকিয়ে ওকে দেখে মুখটা আরেকদিকে ঘুরিয়ে ফেললাম। একটু পর পাশে তাকাতেই দেখলাম ও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি চোখ মুছে খানিকটা বিব্রত হয়েই বললাম-কী ব্যাপার? এমন করে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?
রাফিন চমকে উঠে বললো- হুমায়ুন আহমেদের কোনো একটা গল্পে পড়েছিলাম যেনো, কাঁদলে সুন্দরী রমণীদেরও নাকি খারাপ দেখায়। আজ ঠিক উল্টোটা দেখলাম।
আমি আরো খানিকটা বিব্রত হয়ে বললাম-কী সব বলছেন! অদ্ভুত তো!
রাফিন বললো- যে মারা গিয়েছে, সে তোমার কী হতো?
আমি এবারে রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম- ফুফু হতো।
,
তারপর চুপ করে বসে রইলাম। রাফিন চলে গেলো বাইরে। দুদিন পর বাড়িতে ফিরেছি। দুপুরবেলা হঠাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো।রিসিভ করে জানতে পারলাম রাফিন। ফুফাতো  ভাইয়ের কাছ থেকে নাম্বারটা নিয়েছে।
রাফিন বাবা, মায়ের একমাত্র ছেলে। বাড়ি মাগুরাতে। একটা কোম্পানিতে চাকরি করছে পড়াশুনা শেষ করে। ইঞ্জিনিয়ার ও। আমার কাছে কল দেবার কারণ হিসেবে জানতে পারলাম- আমি নাকি মায়াবী চেহারার অধিকারী!
প্রথম প্রথম বেশ এড়িয়ে চলতাম। কথা বলতে চাইতাম না। তারপর আস্তে আস্তে আমার অজান্তেই ওকে ভালোবেসে ফেললাম। এভাবে একবছর কাটার পর ওর বাবা হঠাৎ মারা গেলো। মারা যাবার পরের মাসেই ওর মা আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলো। আমার বাবা মারা গিয়েছিলো অনেক আগেই। মা আর ভাইয়া অমত করে নি। তাই বিয়েটা হয়েই গেলো। আমিও নিজেকে বেশ সুখী ভাবতাম। মনে হতো পৃথিবীর সেরা মানুষটাকে পাশে পেয়েছি আমি। আমার পড়াশুনা এইস, এস, সি পর্যন্ত করেছিলাম ওখানেই থমকে গেলো। বিয়ের একবছর পর আমার মাও আমাদের ছেড়ে চলে গেলো বাবার কাছে। ভাইয়া বিয়ে করলো।
,
আমি আর রাফিন ঢাকাতে চলে আসলাম। কারণ, ওর পোস্টিং তখন ঢাকাতে হলো। আমার শাশুড়ি মা মাগুরাতেই থেকে গেলো। গত দেড়বছর বাবার বাড়িতে একবারও যেতে পারিনি। আসলে ভাইয়া যাবার কথা বলেনি আর রাফিনও বলেনি গ্রামে যেতে।
,
আজ দেড়বছর পর বাবার বাড়িতে যাবো। তবে বেড়াতে না। একেবারে চলে যেতে হবে আমাকে। গত কয়েকমাস যাবৎ রাফিনকে বেশ অন্যমনস্ক দেখতাম। ও কেমন এড়িয়ে চলতো আমাকে। প্রয়োজনের বাইরে কথা বলতো না। আমি কতোবার জানতে চেয়েছি- কী হয়েছে? বলেনি ও।
তবে গতকাল রাতে জানতে পেরেছি আসলে ওর কী হয়েছে। ও মেঘা নামে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে তাকে গোপনে বিয়েও করে ফেলেছে। গতকাল রাতে মেঘা আমাদের বাসায় এসে আমাকে সব বলে গিয়েছে। রাফিন তখন তার রুমে বসে ছিলো, আসলে ও কথাগুলো সঙ্কোচে বলতে পারেনি। কারণ, আমি অলরেডি ওর সন্তানের মা হতে চলেছি। তাই হয়তো মেঘাকে দিয়ে বলালো।
,
আমার সমস্ত বিশ্বাস,ভরসা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে তবুও মেঘার সামনে একফোটা চোখের পানি ফেলিনি। আমি ওকে বলেছি রাফির সাথে কথা বলবো দেখি ও কি চায়।
মেঘা চলে যেতেই বেডরুমে এসে দেখলাম রাফি ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। তবে তা নেহাতই অজুহাত। ওর পাশে বসে বললাম,
--রাফিন? ওই মেয়ে কি বলছে? তুমি নাকি ওকে বিয়ে করেছো? ওকে ভালোবাসো?
রাফিন একটু নড়েচড়ে বসে বললো- হ্যাঁ, আমি ওকেই ভালোবাসি।
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।অনিশ্চিতভাবে কাঁপাকাঁপা  কণ্ঠে বললাম, আর আমাকে ভালোবাসো না?
ও বললো-জানিনা।
আমি শেষবারের মতো ওকে প্রশ্ন করলাম- তুমি কি আমার সাথে সম্পর্কটা রাখতে চাও না?
ও ঠিক ত্রিশ সেকেন্ডের ভিতরই বললো, না। চাইনা।
আমি আর কোনো প্রশ্ন করে ওকে বিরক্ত করিনি।আমি জানি, আমি প্রেগনেন্ট, তাই আপাতত ডিভোর্স হবে না। তাই মেঘাকে দিয়ে সব জানিয়ে আমাকে চলে যেতে বলছে রাফিন।
আমি রাফিনকে বললাম আজ রাতটুকু থাকি। কাল চলে যাবো। রাফি চুপচাপ বসে রইলো।
অন্যদিন রাতে না খেয়ে ঘুমোলে রাফিন কতো রাগারাগি করতো। সেদিন আর কিছুই বললো না। আমি ওর খাবারটা টেবিলের উপর গুছিয়ে রেখেছিলাম। ও আজ খায়নি। সারাটা রাত বসে ছিলাম। রুমের লাইট অন করে ঘুমোনোর অভ্যাস রাফিনের। তাই বারবার ওর মুখটা দেখলাম। মনে হচ্ছিলো আর তো এই মুখটা দেখা হবেনা। বুকের ভিতর মোচড়ামুচড়ি শুরু করেছে কষ্টেরা। তবে মনকে একটা কথা বলেই বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে, রাফিন আর আমাকে চায়না।।
,
সকাল হতেই ও বাইরে বেরিয়েছে কী একক প্রয়োজনে যেনো। আমি শেষবারের মতো সবকিছু গুছিয়ে রাখছি। ওর পোশাক থেকে শুরু করে বিছানা পর্যন্ত সব গুছিয়ে ফেলেছি। ওর ওষুধের প্রেসক্রিপশন সবগুলো একসাথে করে গুছিয়ে ডাক্তারদের কার্ড সহ একটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলাম।
কিচেন, ডাইনিংরুম সব গুছিয়ে বেলকনিতে এসে প্রিয় চেয়ারটাতে একটু বসেছি। এই চেয়ারে বসেই কতো বিকাল, সন্ধ্যা কাটিয়েছি গত তিনবছরে তার হিসাব নেই। কাজ করে কেমন ক্লান্ত লাগছে এখন। পেটটাও বড় হচ্ছে দিনদিন। ছয়মাস প্রায় হয়ে গেলো। বাবুটা এখন বেশ নড়াচড়া করে। মাঝে মাঝে পেটের ভিতর এমনভাবে নড়াচড়া করে যে, বেশ ব্যাথা পাই। কিন্তু তখনি রুমের ওয়ালে টানানো বাবুদের ছবির দিকে তাকালেই কষ্টটা কমে যায়। মনে হয়, এইতো আর কয়েকমাস পরই ওইরকম একটা কিউট বাবু আমার কোলজুড়ে আসবে।
প্রতিদিন বিকালে বসে থাকতাম বেলকনিতে আর রাফিন বাসায় ফিরে পিছন থেকে আচমকা কাঁধে হাত রাখতো।
আমি এখন ঠিক কতোটা মানুষিক যন্ত্রণা পাচ্ছি, তা বলে বোঝানোর মতো না।।
মনে হচ্ছে, এসব স্বপ্ন দেখছি আমি। হঠাৎই হয়তো ঘুম ভেঙে যাবে আমার।
তখনি রুমের দরজা ঠেলে কেউ ভিতরে ঢুকলো। আমি চমকে পিছনে ফিরে দেখলাম রাফিন এসেছে।উঠে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি এনে টেবিলের উপর রেখে বললাম, আমার রেডি হতে আর আধঘন্টা লাগবে।রাফিন একবার আমার মুখের দিকে তাকালো। তবে কোনো উত্তর দিলোনা। আমি ভাবছিলাম এই হয়তো ও বলবে যে, কোথাও যেতে হবেনা তোমার। এই বাসা, আমি সবই তোমার।
তবে ও কিছু বললো না। আমি আশাহত হয়ে গোসল করতে চলে গেলাম। গোসলখানার দরজা আটকে প্রাণভরে কাঁদলাম। এ কান্না বিশ্বাসভঙ্গের কান্না। এ কান্না প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে দূরে থাকার ভয়ের কান্না।
,
গোসল শেষ করে এসে বিয়ের দিন যে লাগেজে করে মা সবকিছু দিয়েছিলো, তা বের করলাম। তার মাঝ থেকে রাফিন যা যা দিয়েছিলো সব সাজিয়ে রুমের যেখানে যা রাখা হয়, সেখানে তা রাখলাম। আর বিয়ের দিন মা একটা মিষ্টি কালারের সুতির শাড়ি দিয়েছিলো সবসময় পরার জন্য সাথে পেটিকোট, ব্লাউজ সব। আমি ওটা বের করে নিয়ে পরে আসতেই রাফিন খানিকটা অবাক হয়ে বললো, এই পুরোনো শাড়িটা পরলে!
আমি বললাম সেদিন যেমন এসেছিলাম আজ তেমনি যাবো। এসব আজ মূল্যহীন। তোমার সাথে তোমার দেওয়া সব জিনিস রেখে যাবো।
খুঁজে খুঁজে আমার মায়ের দেওয়া জিনিসগুলো নিয়ে বাকিসব বের করে রাখলাম।কানে,গলায় রাফির দেওয়া গহনাগুলো,আংটি সব খুলে রাখলাম। হঠাৎ একটা জিনিস দেখে চোখটা থমকে গেলো আমার।একটা পায়েল!
রিলেশনের পর রাফিনের সাথে যেদিন আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো, সেদিন আমার পায়ে এই পায়েলটা রাফিন পরিয়ে দিয়েছিলো। পায়েলটা হাতে নিয়ে রাফিনের সামনে গিয়ে বললাম- সেই দিনটার কথা মনে আছে তোমার?
রাফিন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
আমি বললাম এটাও রেখে গেলাম।
ওকে বললাম একটু এখানে আসো। ও আসতেই আমি ওর হাত ধরে টেনে ড্রয়ারের সামনে নিয়ে গিয়ে টেনে খুলে বললাম- এখানে সব প্রেসক্রিপশন আর ডাক্তারের কার্ড রেখেছি। ওষুধ খেতে যেনো কখনো ভুলে না যাও! আর আমাকে যে গহনাগুলো দিয়েছিলে, তা ওই পাশের ড্রয়ারে রেখেছি।
বাকিসবও গোছানো। আমি আমার ডাইরিগুলো আর কয়েকটা বই নিয়ে যাবো। আর তুমি ওষুধ ঠিকমতো খাবে। সব ওষুধের নামসহ কখন খেতে হবে পরিষ্কার করে লেখা আছে আর ওষুধগুলো ওষুধের বক্সেই আছে।
আর ল্যাপটপ নিয়ে অযথা বসে থেকে রাত জাগবেনা। আস্তে বাইক চালাবে আর বাইক চালানো অবস্থায় ফোনে কথা বলবে না।
আমাদের একসাথে তোলা ছবিগুলো থেকে আমার অংশটা কেটে পুড়িয়ে দিয়েছি।
বেডরুমের দেয়ালে টানানো বড় ছবিটা নামিয়ে এনে ফ্রেম ভেঙে ছবিটা বের করে আমার অংশটা ছিড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম। রাফিন নির্বাক হয়ে দেখছে সব।
রাফিনের চোখের দিকে আর তাকালাম না। কারণ তাতে আমি দুর্বল হয়ে পড়বো।
শেষবারের মতো বাসাটা ঘুরে দেখে এসে রাফিকে বললাম, আমার কাছে টাকা নেই। যাবার খরচটা দিবে?
রাফিন কেমন যেনো চমকে উঠে বললো- আমি তোমাকে যশোর রেখে আসবো। আমি সাথে সাথেই বললাম, না। তার দরকার নেই।
যাবার আগে একটা চাওয়া আছে আমার। চাওয়াটা পূরণ করবে তুমি?
রাফিন বললো। বলো কি চাও।
আমি বললাম, আমি শুধু চাই আমার পেটে যে বাচ্চা আছে, সে শুধুই আমার হবে। তার প্রতি কোনো দায়িত্ব তুমি পালন করবেনা। কোনো অধিকার তোমার থাকবেনা। আমি ওকে আমার পরিচয়ে মানুষ করবো। শুধু তোমার নামটা ওর বাবার নামের জায়গাতে থাকবে।
রাফি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তা হয়না। তুমি কিভাবে ওকে মানুষ করবে?
আমি বললাম পেটে যখন রেখেছি, জন্ম দিবো, ওকে বড়ও করবো যেভাবেই হোক। তুমি তোমার নতুন জীবনে সুখী হও। আর ওর যেদিন জন্ম হবে, তার পরদিন তোমাকে জানাবো। ডিভোর্স লেটারটা পাঠিয়ে দিও।
আর ভালো থেকো। যত্ন নিও নিজের।
আমার মতো মেঘাকেও ঠকিয়ো না।
ও তোমাকে ভালোবাসে।
আমি বাসার বাইরে চলে এসেছি। হঠাৎ হোচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম রাফিন হাতটা ধরে ফেললো। আমার পৃথিবীটা যেনো আলাদা লাগতে শুরু হলো। মনে হলো শেষবার তোমার স্পর্শ পেলাম।
রাফিন গাবতলী পর্যন্ত এসেছে, আমাকে গাড়িতে তুলে দিতে।
আমি গাড়ির জানালার কাছে বসেছি। আজ নিজেকে একেবারে শূন্য মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই হয়তো ও বলবে নেমে আসো গাড়ি থেকে। আমাকে রেখে কোথায় যাবে তুমি!
,
গাড়িতে বসে আছি রাফিন জানালার বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ও চুপচাপ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।
রাফিন টিকিটটা কেটে এনে টিকিট আর এক হাজার টাকা আমার হাতে দিয়েছিলো। আমি দুশো টাকা রেখে বাকিটা ওর হাতে দিয়ে দিলাম। ও শুধু বললো সাবধানে থেকো। আমি মাঝেমাঝে খোঁজ নিবো।
আমি সত্যি বিদ্রুপের হাসি হাসলাম। ওর খোঁজ নেওয়াটা সত্যি আজ হাস্যকর। গাড়িটা ছেড়ে দিচ্ছে দেখে চমকে উঠে রাফির দিকে তাকালাম ও অস্থির হয়ে আমার দিকে তাকালো।
তবে একবারো বললো না যে, যেও না তুমি।।
আমি বললাম ভালো থেকো তুমি।।
কথাটা ওর কানে গেলো কিনা জানিনা। তবে দেখলাম ও এদিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে আছে।
ও চোখের আড়াল হয়ে যেতেই আমি চোখটা বন্ধ করে ফেললাম। চোখের উপর শুধু রাফিনের মুখটা ভাসছে।। শুধুই রাফিন।
সন্ধ্যার দিকে গ্রামে পৌঁছালাম। বাড়িতে ঢুকে ভাইয়াকে পেলাম না। ভাবি বেশ অবাক হলো এমনভাবে আমাকে দেখে। শুধু বললো এতোদিন পর এভাবে আসলে?
আমি বললাম একেবারে এসেছি।
মায়ের ঘরের চাবিটা দাওতো।
ভাবি মায়ের ঘরের চাবিটা দিতেই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বিছানার উপর বসে পড়লাম।
রুমের লাইট অন করে দেখলাম মায়ের ঘরের সবখানে ধুলোবালি জমেছে। ব্যাগ রেখে সব গোছাতে শুরু করলাম। সবখানে মায়ের স্মৃতি। মায়ের কয়েকটা শাড়ি ছিলো মায়ের বাক্সে। শাড়িগুলো নাকের কাছে ধরতেই কেমন যেনো মনে হলো মায়ের শরীরের গন্ধ পাচ্ছি। মায়ের শাড়িগুলো জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছি। বুকের ভিতর জমানো কষ্টগুলো আর বাধা মানছে না। আজ সত্যি কেউ নেই আমার।
হঠাৎ কারো হাত আমার মাথার উপর পড়তেই চোখ তুলে দেখলাম আমার ভাইয়া।
ভাইয়া বললো- কী হয়েছে তোর?
কাঁদছিস কেনো? এতোদিন পর এভাবে আসলি? কী হয়েছে?
আমি কাঁদতে কাঁদতে ভাইয়াকে সব বললাম। সব শুনে ভাইয়া মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো কাঁদিস না। জীবনে এমন ঝড় আসে। সামলে নিতে হবে। আমি জানি তুই কতোটা কষ্ট পাচ্ছিস, তবে মেনে তো নিতেই হবে বোন।
ভাইয়া বললো চিন্তা করিসনা। আমরা দুমুঠো খেতে পারলে তুইও খাবি।
সেদিন সারাটা রাত ঘুমোতে পারলাম না। বারবার রাফিনের কথা মনে পড়ছে, ওকে ভুলকরে ডাকছি বারবার। আচ্ছা ও কি মিস করছেনা আমাকে?
সকালে ভাবি এসে খাবার দিয়ে গেলো বেশ বিরক্তির সাথেই। আসলে আমি একটা বড়োসড়ো বোঝা তা সে বুঝতে পারছে। সন্ধ্যাবেলা ভাইয়া এসে বললো- মায়ের জমিতে যে ধান হয়, তা তুই নিস আর আলাদা রান্না করিস।
আমি নির্বাক হয়ে বসে রইলাম। রাতে কিছু না খেয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ মায়ের সেলাই মেশিনটার কথা মনে পড়তেই উঠে বসলাম। মেশিনটা মা মারা যাবার পর ভাবি চালাতো। আমি দেখলাম ভালোই আছে।
ভালো করে মুছে ফেললাম সেলাই মেশিনটা।
সকালে পাশের বাড়ির এক দর্জি ভাবির কাছে গিয়ে কাপড় কাটার নিয়ম শিখলাম। বিয়ের আগে পারতাম আমি। তবে এই তিনবছরে অনেকটাই ভুলে গিয়েছি।
সাতদিন পর থেকে ওই ভাবির সাহায্যে কাপড় বানানোর অর্ডার নিয়ে কাজ শুরু করলাম। প্রথম প্রথম দেরি হতো। এখন বেশ পারি। এক প্রতিবেশী ভাই বেশ কয়েকটা ছোটো ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। আমি এখন মোটামুটি নিজের খাবারের ব্যাবস্থা নিজে করতে পারি।
আসলে সবাই এতো সাহায্য করেছে যে, আমাকে থমকে থাকতে হয়নি।
দুমাস কেটে গিয়েছে। আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে বাবু নড়ছে না পেটের ভিতর। ভয়ানক দুশ্চিন্তা নিয়ে যশোর শহরে এসেছি এক গাইনি ডাক্তারকে দেখাতে। আসার সময় পাশের বাড়ির ভাবির কাছ থেকে দু'হাজার টাকা ধার করে এনেছি। আমি একজনের কাছে একহাজার মতো টাকা পাবো, ওটা নিয়ে বাকিটা কাজ করে ভাবিকে শোধ করে দিতে পারবো।
ওয়েটিং রুমে বসে আছি। হঠাৎ পাশে কারো গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখলাম রাফিন।
আমি অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে ওকে দেখছি।ও সমান অবাক হয়েছে।
ও বললো, কোনো সমস্যা হয়েছে?
আমি মাথা নিচু করে বললাম, না। তবে বাবু গত দুদিন যাবৎ তেমন নড়ছে না। তাই আসলাম।
রাফিন বললো, তেমন খারাপ কিছু?
আমি মাথা নাড়ালাম।
রাফিন খানিকটা কৈফিয়ত দেবার মতো করেই বললো। মেঘাকে নিয়ে গতমাসে যশোর চলে এসেছি।ওর একটা সমস্যা হচ্ছে, তাই আসলাম। ও শপিং করেই আসবে এখানে।
আমি চুপচাপ বসে রইলাম।
রাফিনও চুপ।
আমার সিরিয়াল আসতেই ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে পড়লাম। ম্যাডামকে সব বলতেই উনি পরীক্ষা, নিরিক্ষা করে বললেন সমস্যা নেই। সময় হয়ে এসেছে, তাই পেটটা ভারী হয়ে এমন মনে হচ্ছে।
আমি প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতেই রাফিন এসে বললো, কোনো সমস্যা?
আমি মৃদু হেসে বললাম, নাহ।সমস্যা নেই।
ও বললো তোমার চোখমুখ এতো বসে গিয়েছে কেনো? খাবার খাওনা ঠিকমতো? খুব চিন্তা করো?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরাসরি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, খাবার?
আচ্ছা, তুমি ভালো আছোতো?
রাফিন প্রশ্নটার উত্তর না দিয়ে আধোমুখে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর বললো জানিনা।
আমি বললাম, আমার সব প্রশ্নের উত্তরই জানিনা হয়! তা যাই হোক। ভালো থেকো।
আমি বাইরে বেরিয়ে আসতেই রাফিন ছুটে এসে বললো, আমি জানি তুমি ভালো নেই। আমাকে একটু দায়িত্ব নিতে দাও।
আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম- যেদিন থেকে আমাকে অস্বীকার করেছো, সেদিন থেকে সব দায়িত্ব,অধিকার মূল্যহীন হয়ে গিয়েছে চিরতরে।আমি কোনোদিন মারা গেলে, সেদিন বাচ্চাটার দায়িত্ব নিও। কারণ, সেদিন আর ওর কেউ থাকবে না। আর দু'একমাসের ভিতরেই বাবু পৃথিবীতে আসবে। আসলেই কাউকে দিয়ে ফোন করাবো তোমার কাছে। তুমি ডিভোর্স পেপারটা রেডি করে রাখতে পারো। সময়তো আর বেশি নেই।
আর শোনো? যদি খবর পাও বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে আমি মারা গিয়েছি, তবে সাথে সাথে এসে তুমি ওকে নিয়ে যেও আমার কবরে একমুঠো মাটি দাও বা না। আমি চাইনা ও পরের অবহেলায় মানুষ হোক।
রাফিন কথাটা শুনে আমার হাতটা ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললো। আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে টানা রোঁদের ভিতর হাঁটতে শুরু করলাম। আচ্ছা, রাফি আমাকে একসময় ভালোবাসতো। সেই ভালোবাসা কি এখনো ওর মনের গভীরে কোথাও অল্প একটু আছে?
নাকি সম্পর্কের সাথে সাথেই তা অস্তিত্ব হারিয়েছে?
জানিনা। আজ আর কিছুই জানতে মন চায়না।
,
বাড়িতে এসে বিশ্রাম নিলাম কিছুটা সময়। তারপর বসে পড়লাম সেলাই মেশিন নিয়ে। আমাকে একমাসের ভিতর কয়েক হাজার টাকা গোছাতে হবে। কারণ, বাবু হবার সময় যদি কোনো সমস্যা হয়? হাসপাতালে নিতে হয়?
সারাদিন কাজ করছি। ভারী পেট নিয়ে নড়তে কষ্ট হয়। খেতে পারিনা কিছু। মাঝে মাঝে কষ্টের কারণে রান্না না করে না খেয়ে থাকি। মায়ের মুখটা খুব মনে পড়ে আজকাল। মনে হয় মাও এতোটা কষ্ট করেছে আমার জন্মের সময়। মাঝে মাঝে কষ্টে খুব কাঁদি, একা একা।
ভাইয়া মাঝে মাঝে কিছু খাবার কিনে এনে দিয়ে যায়। বুঝি সে আমাকে খানিকটা ভালোবাসে। ভাবি তেমন খোঁজ নেয়না আমার।
দিন কেটে যাচ্ছে একেক করে।। আজকাল রাফিনের জন্য আগের মতো ভীষণ কষ্ট হয়না। কারণ, হয়তো শারীরিক অসুস্থতা আমাকে দিনদিন অনুভূতিহীন করে তুলছে। শরীরটা বড্ড দুর্বল লাগে, মাথা ঘুরায়। ভারী পেটটা নিয়ে নড়তে পারিনা তেমন। তবুও বাঁচার এবং বাঁচানোর তাগিদে আমি বেঁচে আছি। বাবু মাঝে মাঝে জোরে ধাক্কা দেয় পেটের ভিতরে। ব্যথা পেতেই একটা ছোট্ট মুখ ভাসে চোখের সামনে, তখনি ব্যথাটা হারিয়ে যায়।
বিকাল বেলা বসে আছি জানালার পাশে। দশটা ছেলেমেয়েকে প্রাইভেট পড়াই। ওরা এইমাত্র পড়ে চলে গেলো। কেমন যেনো পেটের ভিতর হালকা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। ভাবলাম এমনি হচ্ছে। তারপর সন্ধ্যা হতেই বুঝতে পারলাম ব্যথা বাড়ছে।
বুঝলাম আমার বাচ্চা হবার সময় হচ্ছে। একটা মেয়েকে দেখে বললাম, পাশের বাড়ির আয়েশা ভাবিকে ডেকে দেবার কথা।
ভাবি ছুটে আসলো দ্রুত। এসেই বুঝলো সব।
ব্যথার তীব্রতা বাড়ছে।আমি বিছানায় শুয়ে ছটফট করছি। জীবনে এতো যন্ত্রণা কোনোদিন পাইনি।একটানা কেঁদেই চলেছি আমার পাশে সেই ভাবি, আমার ভাবি আর দুজন চাচি বসে।
আমি যন্ত্রণায় ছটফট করছি।
মনে হচ্ছে মারা যাবো আমি।
শেষরাতে ব্যথা প্রচণ্ড বেড়ে গেলো। আমি সহ্য করতে না পেরে জোরে জোরে কাঁদছি। বারবার রাফিনের মুখটা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে ওর মুখটা দেখতে পেলে কষ্টটা একটু কমতো।
সকাল বেলা আমি বারবার জ্ঞান হারাতে শুরু করলাম। ব্যথা সহ্য করতে পারছিলাম না আর।আমার ভাই গাড়ির ব্যবস্থা করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
বহু বছর পরে ভাইয়ের চোখে পানি দেখলাম। ভাইয়া গাড়ির ভিতর আমার ক্লান্ত, অবসন্ন হাতটা ধরে বসে আছে আমার মাথার কাছে।
বারবার আমার যন্ত্রণায় কুকড়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছছে। আমার ঝাপসা চোখের সামনে রাফিনের মুখটা ভাসছে।।
হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর প্রসবকক্ষে প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ্য করছি। বারবার ভুল করে রাফিনকে ডাকছি।যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। শেষবার প্রচণ্ড যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলাম।
কিছুক্ষণপর নার্স বললো- একটা ছেলে হয়েছে আপনার।
আমি ঝাপসা চোখে মাথার উপরে স্বশব্দে ঘুর্ণায়মান ফ্যানের দিকে তাকালাম। ক্লান্তিতে চোখটা বুজে আসলো। পাশ থেকে নার্সের ডাকে বহুকষ্টে চোখ খুললাম। নার্স বলছে বাবুকে দেখবেন না?
আমি উত্তর না দিয়ে চোখটা বন্ধ করে ফেললাম আবারো।
একঘণ্টা পর আমাকে একটা কেবিনে এনে দিয়ে গিয়েছে নার্সরা। একটু পর বাবুকে এনে আমার কোলের ভিতর দিয়ে গেলো। আমার কোলের ভিতর রাফিনের সর্বশেষ স্মৃতি হাত পা নাড়ছে। আমি খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। বাইরে প্রচণ্ড রোঁদ। দুপুর হয়ে গিয়েছে হয়তো।
ছেলেটার মুখটা ভালো করে দেখলাম। হুবহু রাফিনের মতো দেখতে। শুধু ঠোঁটটা আর নাকটা আমার মতো। আমি ওর হাতটা ছুঁয়ে দেখলাম। কতো ছোটো আর নরম হয়েছে ও। ওর শরীর থেকে একটা বাচ্চা বাচ্চা গন্ধ আসছে। বাবুও আমার বুকের কাছে চলে আসছে। আমার শরীর থেকেও কি ও মা মা গন্ধ পাচ্ছে?
সবাই বাবুকে আমার কাছে আনার আগেই দেখেছে। তাই এখন কেউ আসবে না। আমি বহু কষ্টে উঠে বসে ওকে কোলে নেবার চেষ্টা করলাম।ভয় হচ্ছে যদি ও হাত থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়।
কী নরম শরীর ওর!
কোলে নিতেই ও মুচড়ে উঠে কেঁদে ফেললো। আর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ দেখলাম রাফিন আমার সামনে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারপর কোনোমতে বললাম- খবরটা পেয়ে ছুটে আসলে? তা ডিভোর্স পেপারটা আগে দাও। সই করে দিই। কলম এনেছো সাথে?
রাফিনের চোখে পানি দেখলাম। ও বললো মেঘার একটা অপারেশন করাতে হলো কয়েকদিন আগে।।মেঘা আর মা হতে পারবেনা কখনো।
তুমি আমার জীবনে চলো। মেঘাও আর চায়না আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে। ও ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েছে আমাকে। ও খুব দ্রুত ইতালি চলে যাবে ওর বোনের কাছে।।
আমি বিদ্রুপের হাসি হেসে বললাম। আমার জীবনে তোমার কোনো জায়গা আর বেঁচে নেই। একসময় তোমাকে ছাড়া থাকতে পারতামনা। খুব কষ্ট হতো।কই? তখনতো ফেরত আসোনি?
আজ আমি বা আমার বাবুর কাউকে প্রয়োজন নেই তোমার। আজ আমি তোমাকে ছাড়াই চলতে শিখে গিয়েছি। আর আজ থেকে আমার মানুষিক শক্তি আরো বেড়ে গেলো। কারণ, আমি আর একা নেই।আমার বাবু আছে সাথে।।
আর তোমার জীবনে দু'দিন পর আবার আরেক মেঘা আসবে। তুমি আমাকে অস্বীকার করবে, পরিত্যাক্ত ঘোষণা করবে। তার চেয়ে তুমি তোমার মতো থাকো। তোমাকে অস্বীকার করছি আমি। আমার জীবনে তুমি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছো।
রাফিন কাঁদতে কাঁদতে বললো- আরেকবার সুযোগ দাও আমাকে। ক্ষমা করো প্লিজ।
আমি ক্লান্ত স্বরে বললাম, তুমি চলে যাও। আমার বড্ড ক্লান্ত লাগছে। কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা। আমি ঘুমোবো।
জানালার ফাঁক দিয়ে বাবুর মুখের উপর হালকা রোদ পড়ছে। ও ঘুমিয়ে পড়েছে। ও ঠিক রাফিনের মতোই ঘুমোচ্ছে। ওর একটা ছোট্ট হাত দিয়ে আমার মলিন শাড়ির একটা অংশ ধরে আছে। আমি ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
পাশেই রাফি বসে কাঁদছে। কাঁদতে থাকুক।
ওর শাস্তি শেষ হবে। তারপর ও মুক্তি পাবে।
আমি বাবুকে জড়িয়ে ধরে চোখটা বন্ধ করলাম।বাবুর গায়ের তীব্র গন্ধ আমার নাকে এসে পৌঁছাচ্ছে আর জানিয়ে দিচ্ছে আমি মা হয়েছি।।
সমাপ্ত...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...