রুপায়নের জন্মদিন
রুপায়নকে ছেড়ে আসার সময় ওর বয়স চারমাস, এ বয়সে বাবা ডাকটাও শেখেনি। চারমাসের শিশুটি তেমন কারো কাছেই যেতে চাইত না, বিশেষ করে কালো বা শ্যামলাদের কাছে মোটেও না। তবে কেন যেন কালো হলেও বাবার কোলে লেপ্টে থাকে ছেলেটা, বাবা ঘরে ফেরার পরে কোনভাবেই অন্য কারো কোলে রাখা দায়। রুপায়নের জন্য একমুহূর্তও বাইরে মন টেকে না আবীরের। সকালে
অফিসে যাবার পর থেকেই মনটা ছটফট করে কতক্ষণে বাড়ি ফেরা যাবে, ঘন্টায় ঘন্টায় রুনীকে ফোন করে রুপায়নের খোজ করে। কি করছে, কি খাচ্ছে, কাঁদলো কিনা।
অফিসে যাবার পর থেকেই মনটা ছটফট করে কতক্ষণে বাড়ি ফেরা যাবে, ঘন্টায় ঘন্টায় রুনীকে ফোন করে রুপায়নের খোজ করে। কি করছে, কি খাচ্ছে, কাঁদলো কিনা।
সাতটার সময় অফিসের বস এসে নতুন কিছু ফাইল ধরিয়ে দিল, অনেক অনুরোধ করার পরেও সে ছাড়তে রাজি না।
-“স্যার এই কাজগুলো বাসায় বসে করে কাল নিয়ে আসি? আমার একমুহুর্তও থাকা সম্ভব না। আমার সন্তান আমাকে ছাড়া খুব কষ্টে থাকে, সেই বিকেল থেকে কাঁদছে!”
আবীরের ধৃষ্টতা দেখে অবাক হয় অফিসের বস, তার মুখের উপরে কেউ কোন কথা বলে না। অতঃপর গর্জে ওঠে,
-“চাকুরী যদি করতে চান, এটা এখানেই শেষ করে যান।”
আবীর ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বন্ধ করা পিসিটা চালু করে। ডেস্কটপে ছেলেটার ছবির দিকে তাকালো, ছবিটা ডেস্কটপ থেকে চেঞ্জ করে ওয়ার্ড খুলে টাইপ শুরু করল। পেপারটা প্রিন্ট করে অফিসিয়াল খামে বসের রুমের টেবিলে পেপার ওয়েটের নিচে রেখে পাশে ফাইলগুলো রেখে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লো সে। যে চাকুরী সন্তানের প্রতি ভালোবাসাকে অবজ্ঞা করে সেই চাকুরী আবীরের পক্ষে করা সম্ভব না।
ঘরে ফিরে দেখে রুপায়ন ঘুমানো, আবীর কাউকে কিছু বলে না, ঘুমন্ত ছেলেটার কপালে চুমু দেয়। নির্ঘুম রাতে মাঝে মাঝে বারান্দায় পায়চারি করে। কখনওবা রুমে এসে খেয়াল করে, ছেলেটা ঘুম থেকে ঊঠেছে কিনা। নাহ, মা ও ছেলে গভীর ঘুমে নিমগ্ন। আবীরও খুব ভোরে পাশে এসে শুয়ে পড়ে।
-“কই উঠবে না, সাড়ে সাতটা বাজে। অফিস ধরবে কি করে।”
রুনির কথায় কর্ণপাত না করে ঘুরে বার ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে রুনি আবার ডাকলে আবীর বলে,
-“অফিস থেকে পনেরো দিনের ছুটি নিয়েছি।”
রুনি বিস্ময়সূচক চোখে আবীরের দিকে তাকায়। আবীর মিথ্যে বলতে পারে না, মিথ্যে বললে ওর চোখ কাঁপে! তাই মাথা নিচু করে, রুনি বিড়বিড় করে বলে।
-“যারা শুক্রবারও ছুটি দিতে চায় না তারা দেয় পনেরোদিনের ছুটি!”
আবীর আর ঘুমোয় না, রুপায়নকে কোলে নিয়ে খাবার খাওয়ায়। দুপুরের দিকে রুপায়নকে বুকে নিয়ে কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়, চারমাসের শিশুটিও বাবার বুকে উপুড় হয়ে ঘুমোতে পারে। দুপুরে খাবার সময় রুনি আবার জিজ্ঞেস করেছে,
-“কি ব্যাপার অফিসে গেলে না যে !”
-“বললাম না, ছুটি নিয়েছি।”
রুনি আবীরের চোখের দিকে তাকায় সে মাথা নিচু করে। রুনিও চুপ হয়ে যায়, তবে তার ভেতরে কিঞ্চিৎ সন্দেহের দানা বাঁধে। আবীরের অফিসে কিছু না কিছুতো হয়েছেই নাহলে ও এভাবে অফিস ছুটি নেওয়ার মানুষ সে না। আর ওর মত কর্মীকে অফিসও এতদিনের ছুটি দেবার কথা না।
বিকেলে ছাদে রুপায়নকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে, সামনের ছাদের ছেলেগুলো ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। পুরান ঢাকায় ছাদগুলোতে এসময়ে ঘুড়ি ওড়ানোর খেলা হত, ছোট বেলায় বরিশাল থেকে লঞ্চে ঢাকায় আসার পর থেকেই পুরান ঢাকায় তাদের বাস। চাকুরিটা মতিঝিলের দিকে হলেও বরাবরই ওদিকে থাকার প্রতি অনীহা ছিলো। সেই ঘুড়ি ওড়ানো ও ডাঙ্গুলি খেলা এগুলো নতুন ঢাকায় হয় না বলে প্রাণের খোঁজ পাওয়া যায় না।
রুনির অনেক চাপ থাকার পরেও এই মোটা দেওয়ালের পুরাতন বাড়িতে থাকতেই আবীর বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে আসে। বাড়ির আঙিনায় লাগানো সেই নারকেল গাছের সাথে সাথে আবীরও এক বছর দু বছর করে বড় হয়েছে। ছাদে এলে এখনো মনে হয় গাছগুলো যেন ওকে কিছু বলতে চায়। ইদানীং ছাদে লাগানো গাছগুলোও যেন এক এক প্রাণে আলাদা আলাদা কথা বলে, আবীর চাইবে রুপায়নের বেড়ে ওঠাও যেন এই বাড়িতেই হয় ও যেন বেড়ে ওঠে এই পরিবেশেই।
পনেরদিন এভাবে কেটে গেলেও আবীরের অফিসে ফেরা হয় না, রুনি শুরু থেকে সন্দেহ করেছিলো বলে আবীরের অফিসে খোঁজ নিয়ে সব জেনেছে। তবে সে আবীরকে কিছুই বলেনি, পনেরোদিন পরে কি হয় দেখতে চেয়েছে। কিন্তু রাতে বাবুকে ঘুমিয়ে দিয়ে আবীরের হাত ধরে টেনে বারান্দায় যায়,
“চাকুরী ছেড়েছো কেন?”
আবীর বুঝতে পারে রুনি সব কিছুই জেনে গেছে, তাই নির্বাক অপরাধীর মত চুপ করে মাথা নিচু করে থাকে।
-“কাল থেকে চাকুরী খুঁজবে, প্রতিদিন।”
আবীর রুনির চোখের দিকে না তাকিয়েই মাথা উপরে নিচে নাড়ায়।
মধ্যরাতেই রুপায়ন ঘুম থেকে উঠে কান্না করে, আবীর রুনিকে ডাকে।
-“ওঠো, বাবুকে দুধ খাওয়াও।”
রুনি ওঠে না, “তুমি দুধ বানিয়ে খাইয়ে দাও” বলে ঘুরে শুয়ে পড়ে।
আধো আলোতে রুপায়নকে কোলে নিয়ে রুনির দিকে তাকায়, এ যেন অন্য রুনি। ও কি ভুলে গেলো ছেলেটা বুকের দুধ ছাড়া খায় না!
-“কিন্তু বাবুতো বুকের দুধ খায়।”
-“এখন থেকে বাইরের খাবারও খাওয়ানো শেখাও।”
রুনির কথায় অবাক লাগে, আবীর রুপায়নের জন্য দুধ বানিয়ে ফিডারে দেয়। বাচ্চাটা ফিডারের নিপলে মুখ দিতে চায় না, শুধু কাঁদে। রুনিকে ডাকলেও সে খেয়াল করে না। আবীরের কোলে বাবু তেমন কাঁদে না কিন্তু আজ মাঝরাতে কেঁদে কেঁদে অস্থির। অনেক কষ্টে কিছু দুধ খাইয়ে, নিজের কোলে নিয়ে ঘুমোয়।
রুপায়ন আগে বিছানার ওয়াল সাইডে রুনির দিকে ঘু্মাত, ইদানীং রুনি ওকে মাঝে রাখে। বেশ কিছুদিন হলো রুনির সাথে আবীরের বিছানার সম্পর্ক নেই, মাঝরাতের সেই খুনসুটি, ভালোবাসাও হারিয়ে গেছে। অথচ আবীরকে ভালোবেসে ওর সাথে থাকবে বলেই পারিবারকে অবজ্ঞা করে আবীরের ঘরে চলে এসেছিল। আবীর প্রতিদিন নিয়ম করে চাকুরী খোজে, সিভির প্রিন্ট কপি খামে ভরে রেখে আসে বিভিন্ন অফিসে। বন্ধুদেরকেও মেইল করে দেয়। যতক্ষণ বাইরে থাকে ততক্ষণ বাচ্চাটার জন্য মন কাঁদে তার। রুনি দুধ খাওয়াক আর না খাওয়াক সকালে নিজে দুধ গরম করে ফিডারে খাইয়ে বের হয় সে আবার দুপুরের মধ্যেই ফিরে গিয়ে আবার খাওয়ায়।রুনির কটমট চেহারা দেখে ওকে জিজ্ঞেস করতেও ভয় করে তার।
রুপায়ন ইদানিন ওর মায়ের কাছে মোটেও থাকতে চায় না, আবীরও তাই বেশিরভাগ সময় বাইরে না কাটিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে আসে। এমনই একদিন দুপুরে বাসায় ফিরলে রুনি বলে,
“আবীর, আমাকে জরুরী বাড়ি যেতে হবে, আম্মা অসুস্থ। বাবা কোনদিন ফোন করে না কিন্তু আজকে ফোন করে অনেক বেশি করে বলেছে আমি যেন বাড়ি যাই।”
আবীর চুপ করে থাকে, রুনিকে ঠিক কি বলবে বুঝে পায় না। মেয়েটা বাবা মাকে ছেড়ে আসার পরে কোনদিন ফিরে যায়নি, আজকে সেই বাবা মা ডাকছে তাহলে ও কি করে নিষেধ করে! নাহ, আবীর এতটা নির্দয় নয়।
-“রুপায়নকে নিয়ে যাবে?”
-“নাহ, ওকে নেব না। ওতো তোমার কাছে থাকতে পারে, তাছাড়া এখনতো ফিডার খায়।”
রুনির কথা শুনে আবীরের কপালে ঘাম ছোটে। তবুও চুপ করে থাকে সে, রুপায়নকে কোলে নিয়ে ছাঁদে চলে আসে। চারিদিকে কা’কা শব্দে করে একপাল কাক উড়ে যায়। রুপায়নকে দুই হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তুলে ধরে সে।
প্রায় সাতমাস হলো রুনি চলে গেছে, আর ফেরেনি। ফিরবেও না।
মাঝে কয়েক জায়গা থেকে চাকুরীর নিয়োগপত্র আসলেও চাকুরীতে যেতে পারেনি। কারন রুপায়নকে দেখবে কে! মা কতবার ফোন করে কিন্তু তাকেও রুনির চলে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। হঠাৎ একদিন বাসায় এসে যখন মা যখন সব দেখলো, তখন বুক চাপড়ে নিজে নিজে কাঁদে। অথচ আবীরের মাও রুনিকে কতইনা ভালোবাসতো। তিনি ভাবেন এই এতদিনে তার ছেলে এই ছোট শিশুটিকে নিয়ে কত কষ্ট করেছে।
এরপর থেকে রুপায়ন দাদীর কাছেই থাকে, দিন বদলাচ্ছে, ছেলেটা যতটা সময় আবীরের কাছে থাকে তার থেকেও বেশি সময় দাদীর কাছে থাকে। রুনী কোনদিন খোঁজ নেয়নি। চাকুরী ছাড়ার দেড় বছর পরে একটা বিদেশী কোম্পানি থেকে চাকুরীর অফার পেয়ে আবীর মায়ের সাথে কথা বলে, তিন বছরের জন্য আফ্রিকার একটি দেশে টেলিকম কোম্পানিতে কাজ নেয়। রুনিবিহীন এগারো মাসে জীবনের আবীর সব অর্থ বুঝে গেছে সে। রুপায়নও বেশ দাদীর সঙ্গ উপভোগ করে।
রুপায়ন কথা বলা শিখেছে, প্রতিদিন বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলে। প্রথম দিকে শিখিয়ে দিতে হলেও তিন বছর বয়স থেকে নিজেই ট্যাব দিয়ে স্কাইপ ওপেন করে বাবাকে কল করতে পারে। ইদানিং একটা মেয়ে এসে ওকে বই পড়ায়, প্রতিদিন পড়া শেষ করেই বাবাকে কল করে রুপায়ন। কি কি পড়েছে সেসব নিয়ে খোশগল্প করে বাবা-ছেলে, ফোন রাখার সময় রুপায়ন বলে,
-“বাবা তুমি কবে আসবে? আই মিস ইউ।”
আবীরের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে,
-“এইতো বাবা আমি সামনের মাসেই চলে আসবো, এক মাস পরে।”
রুপায়ন সান্ত্বনা পায়, সান্ত্বনা নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। মাস যায় কিন্তু আবীরের এক মাস শেষ হয় না। এখন সে দাদীর হাত ধরে স্কুলে যায়। বিকেলে ছাদে ক্রিকেট খেলে কাজের ছেলেটার সাথে। এজন্য ছাদের গাছগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। রুপায়ন গুনতে শিখে গেছে, সপ্তাহে সাতদিন, মাসে ত্রিশদিন, বারো মাসে একবছর সবকিছু বোঝে সে। ইংরেজি সব অক্ষর শিখেছে, বাংলা শিখেছে, বানানও শেষ। প্রতিদিনের পড়া নিয়ে বাবার সাথে কথা হয়, কিন্তু আবীরের সেই একমাস শেষ হয় না। ইদানীং রুপায়ন ক্যালেন্ডারও চেনে।
-“বাবা, আমার জন্মদিন দুই তারিখ। তুমি কবে আসবে?”
-“এইতো বাবা এক মাস পরে।”
-“বাবা একটু দাঁড়াবে, আমি আসছি।”
ছেলেটা কোথায় যেন যায়, পরে আবার ফিরে আসে। ট্যাবের ক্যামেরায় দেখা যায় বিছানায় ক্যালেন্ডার পেতেছে। অর্থাৎ ও গিয়ে ক্যালেন্ডার নিয়ে এসেছে।
রুপায়ন প্রতিদিন ক্যালেন্ডারের এক এক তারিখ দাগিয়ে রাখে, মাসের পর মাস দাগ দেয়। ত্রিশদিন কয়েকবার হয়ে গেছে কিন্তু বাবার একমাস আর হয় না। আবীর নিজের অশ্রুসংবরণ করে, ওর চোখ কেপে ওঠে হাতও কাঁপে। ছেলেটা এখন সব কিছু বোঝে। ওকে পড়াতে আসা মেয়েটা বলেছে, ভাইয়া ওকে আর নার্সারীতে পড়াবো না একেবারে কেজিতে তুলে দেবো।
দেখতে দেখতে দুই তারিখ এসে যায়, খুব ভোরে কল দিলে কেউ ফোন ধরে না, আবীর বেরিয়ে যায় সারাদিন আউট অফ নেটওয়ার্ক থাকায় ফোন করা হয় না। বিকেলে বাসায় ফিরেই ফোন করে, এক রিং হতেই রুপায়ন ফোন ধরে চুপ করে থাকে, আবীর আস্তে করে বলে,
-“হ্যাপি বার্থ ডে বাবা।”
“থ্যাংক ইউ বাবা। বাবা তুমি এখন ফোন করেছো? আমি আজকে সারাদিন ফোন ধরে ছিলাম কখন তুমি ফোন করবে, তোমাকেও পাইনি।”
আবীরের গলা ধরে যায়, ও আজ কোন এক্সকিউজ দিতে চায় না।
রুপায়ন আজকে সকাল থেকে ফোন হাতে নিয়ে থাকে, স্কুলে গেলেও ফোন হাতে। ম্যাম ফোন হাতে কেন জিজ্ঞেস করলে ও বলে, বাবা আজ ফোন করবে। আমার কথা বলতে হবে।
দাদী সন্ধার দিকেই কেক আনিয়েছে কিন্তু রুপায়ন তা ছুঁয়েও দেখেনি। ও বাবার সাথে কথা না বলে কেক খাবে না। বাবাকে কতবার বলেছে যেন জন্মদিনের আগেই বাড়ি ফেরে, কিন্তু সেতো ফেরে না! আজ সারাদিন দাদীর কাছে সেই অভিযোগ তার। আবীরের মা রুপায়নকে নিজের মত করে বোঝায়, মা-ছাড়া ছেলেটা সবকিছু খুব দ্রুত বোঝে। লেখাপড়ায়ও সেই ছাপ স্পষ্ট। রুপায়নের ব্যাপারে স্কুলের টিচাররা অবগত, তাই সবাই ওকে আদরে আদরে রাখে।
আজ স্কুল শেষে প্রিন্সিপ্যালের রুমে গিয়েছিলো রুপায়ন, অনেকদিন পরে ওকে দেখে কোলে তুলে নেয় প্রিন্সিপ্যাল ম্যাম, কিন্তু রুপায়ন তাতে খুশি না হয়ে বলে,
-“ম্যাম আজ আমাকে কেউ হ্যাপি বার্থডে বলেনি, আমি এই স্কুলে আর পড়বো না।”
স্কুলের ম্যাম মৃদু হাসে, বলেন
-“হ্যাপি বার্থডে বললে উত্তরে তুমি কি বলতে?”
-“বলতাম থ্যাঙ্ক ইউ, তবে এখন আর বলবো না।”
স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ম্যাম অনেকগুলো চকলেট দিয়ে মান ভাঙ্গাতে চেষ্টা করে, কিন্তু তাতে কাজ হবেনা। সে টিচারকে বলে দিয়েছে নতুন বছরে সে নতুন স্কুলে যাবে। বাবাকে সে এবার দেশে ফিরিয়ে আনবেই।
রুপায়নের গল্প শুনে আবীরের কষ্ট লাগে, চাপা-কষ্টে বুক ফাটে তার। ছেলেটা অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে, ওকে ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই।
-“বাবা তুমি এবার বলো কবে আসবে?” রুপায়ন বলে।
-“এইতো বাবা আমি আসবো, তা তুমি কেক খাওনি কেন?”
-“কেকটা ফ্রিজে রেখে দিয়েছি তুমি আসলেই খাবো।”
আবীর আর চোখের পানি আঁটকে রাখতে পারে না, কি বলবে বুঝতে পারে না সে। ছেলেটাকে আর কত ফাঁকি দেবে, নিজেকে প্রশ্ন করে।
-“না বাবা আর একমাস পরে আসব বলবো না, তোমাকে নতুন বছরে নতুন স্কুলে দিতেই আমি আসবো, তুমি কেকটা খেয়ে নাও।”
-“আমি জানি আমার বাবা মিথ্যে বলে না, এবার তুমি ঠিকই আসবে আর আমি তখনই কেক কাটবো।”
“আমি তোমার জন্য কি আনবো?”
আবীর বুঝতে পারে ছেলেটা তার মতই জেদি তাই বেশি কথা বাড়ায় না।
“তুমি এসো এবার, তাহলেই হবে।”
রুপায়ন অনেক বড় হয়ে গেছে, ওকে ফাঁকি দেওয়া আর যাবেনা। ওকে ফাঁকি দেওয়া মানে নিজের সাথে বেইমানি করা, বেইমান বাবা হবেনা।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন