জয় আলম
বন্ধুত্ব কিসের নাম আমরা কি ঠিকঠাক জানি? চলুন, একটু বন্ধুত্বের চর্চা করি, বিলুপ্তপ্রায় বন্ধুত্বের।
গত কয়েকমাস আগে আমার নানার আপন ভাই ইন্তেকাল করেছিলেন। সাত ভাইয়ের মাঝে কেবল তিনিই বেঁচে ছিলেন নশ্বর পৃথিবীতে। সাত ভাই ছিলেন তাঁরা। তাদের সাতভাইয়ের সে ধুমধাম জীন্দেগানীর চিত্র আমি দেখিনি। তবে শুনেছি বড়দের মুখে। যখন লাশ দেখতে উনার বাড়ি যাই, মনে হচ্ছিল যেন বাড়ির আঙ্গিনা নিরব কান্নায় নিশ্চুপ নির্বাক ছিল। জানিনা কেন এমন মনে হচ্ছিল। হয়ত আমার স্থুল ভাবনার ভগ্নরূপ নয়তো এটা ছিল অনুভূতির ভিন্ন রূপ।
জানাযা পড়িয়ে গোরস্থানে লাশ নিয়ে আসা হল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে। দাফন শেষ হলে যিয়ারত করে চলে যাব। এর ফাঁকে ইয়াসিন তিলাওয়াত করছি মনেমনে।
পেছন দিয়ে একজন বৃদ্ধ হেটে যাচ্ছেন, ফিরে তাকালাম। দেখি, এখন যার দাফন চলছে সেই মৃত নানার সবচে' কাছের বন্ধু,জিগরীদুস্ত। আমাকে দেখে উনি থামলেন। ধীর পদক্ষেপে কাছে আসলেন আমার। আমি তার চোখে মুখে বেদনার স্পষ্ট ছাপ দেখতে পাচ্ছিলাম। তখনো তার চোখে অশ্রুকণা বিদ্যমান ছিল। বললাম নানা কেমন আছেন? -কিন্তু আমার এই প্রশ্নটা যে ঠিক হয়নি বুঝলাম একটু পর-
'হারা দিন ধইরা খালি অশান্তি অইয়া ঘুররাম রে ভাই। ভিতরে কষ্টে আর মানের না। আমার ইয়ারের লাগি দুয়া করিছ রে ভাই-আমার ইয়ারের লাগি দুয়া করিছ!
কান্নাজড়িত কাঁপা গলায় কোন মতে কথাগুলো বলেই বৃদ্ধ কেঁদে ফেললেন। তখন আমারও চোখের পর্দা ফোঁড়ে ফিকনি দিয়ে কান্না বের হয়ে আসল। অথচ বাড়ি থেকে লাশ নিয়ে আসলাম জানাযা পড়ালাম, কই, কান্না তো আসেনি!
মৃত্যুর আগে ঝর তুফান মারিয়ে প্রায়ই দেখতাম নানার এই বন্ধুটা তাঁকে দেখার জন্য তার বাড়িতে আসতেন।
আগেকার বন্ধুত্ব আজকালের মত শব্দে সীমাবদ্ধ ছিলোনা। ছিল বিস্তৃত, হৃদয়ে হৃদয়ে সংযুক্ত। কিন্তু আজ........থাক বলে লাভ নেই।
আসলে বেলায় অবেলায় সময়ে দুঃসময়ে কাধে হাত রাখা মানুষটার নামই বন্ধু। ভগ্ন হৃদয়ে ভীষণ নিঃসঙ্গতা সান্ত্বনা দেয়া মানুষটার নামই বন্ধু। মৃত্যুর পর কবরের শিয়রে দাঁড়িয়ে দু'ফোটা অশ্রু ফেলে দুয়া করার নামই বন্ধুত্ব।
'তুই আমার জন্য মারপিট করবি, তর পকেট ফাঁকা করে আমার পেট ভরাবি কিংবা আমার গফের জন্য তুই রিস্ক নিবি, এটা চাইনারে বন্ধু। আমি চাই, তোর চোখে জল আসার আগে যেন আমার চোখ ভিজে। তোকে হাসতে দেখলে যেন আমার মন ভরে। তোকে কাছে পাই যেন সবখানে।
তোদের ভালোবাসিরে প্রচণ্ড!

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন