বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

ছোট গল্প

Tabbassum Mou 

এক ফুঁয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দেওয়ার মত করেই যেন ফুরিয়ে গেল অাগস্ট মাস।সারাক্ষণ মুখ ভার করা শহরের এই অাকাশটার দিকে তাকিয়েই অপ্সরীর দিন পার হয়ে যায়। অাকাশের খুব কাছাকাছি থাকে ও। জানালার শিকগুলো ধরে অাপনমনে অাকাশটার দিকে তাকিয়ে থেকে তার পার হয়ে যায় অবসরের সময়গুলো। গ্রাম ছেড়ে, শহরে অাসবার দিনটিতে অপ্সরী ছোট্ট বাচ্চাটির মত অাকুলি বিকুলি করে কেঁদেছিল। মমতাময়ী মায়ের চেহারা, ছোট্ট পুকুরপাড়, বাতাসে ধানের শব্দ , ঘাসের ভেতর চড়ুইপাখির ছানার চিঁ চিঁ অার্তস্বর সবকিছু হারানোর শোকে অপ্সরীর
সেই করুন কান্না কিন্তু নির্মম বাস্তবতাকে এতটুকু পাল্টাতে পারেনি।
অার দশটা মেয়ের মত বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না অপ্সরীর।টলটলে জলের ছোট্ট পুকুরপাড়টায় বসে অাজীবন হাঁসের ছানা নিয়ে খেলা করার স্বপ্ন সে দেখেছিল। সারাক্ষণ তার চোখে খেলা করত অদ্ভুত উদাসীনতা। বাবা তাকে অাদর করে পাগলি বলে ডাকতেন। ওর মা হাজার চেষ্টা করেও ওকে পাড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে খেলা করার জন্য রাজী করাতে পারতেন না।অপ্সরী নির্জন দুপুরবেলায় একাকী গ্রামজুড়ে হেঁটে বেড়াত কোলে থাকত একটা ছোট ছাগলছানা।
হঠাৎ করে ছোট অপ্সরীর সাথে রায়ানের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।অপ্সরী মায়াভরা চোখ নিয়ে বিয়ের রাতে যখন তার স্বামীর দিকে তাকিয়েছিল তখন রায়ান তার কানে ফিসফিস করে বলেছিল "তোমায় বড় ভালবেসে ফেলেছি "।অালতা রাঙা হাতে রায়ান গুঁজে দিয়েছিলএকগুচ্ছ কাঠগোলাপ । সারাটারাত জোছনার মৃদু অালোয় দুজন পাশাপাশি বসে বলেছিল নিজেদের জীবনের সুখ-দুঃখের কত গল্প। অপ্সরীর সেই রাতে মনে হয়েছিল সে বড় ভাগ্যবতী।রুপকথা থেকে উঠে অাসা এক রাজকুমারকে যেন সে স্বামী হিসেবে পেয়েছে।
বিয়ের দুবছর পার হয়ে গেলেও অপ্সরীর মনে হয়েছিল রায়ানের ভালবাসা এতটুকুও কমেনি । বরং অাগের চেয়েও বুঝি রায়ান ওকে অনেক ভালবাসা দিচ্ছিল।বিভিন্ন উপলক্ষ্যে নানারকম সারপ্রাইজ দিচ্ছিল। প্রতি শুক্র বার ছুটির দিনে দুই কপোত -কপোতী মিলে রিকশায় চড়ে শহরটা চষে বেড়াত।রায়ানের কলিগের বৌরা অপ্সরীর ভাগ্য নিয়ে অনেক প্রশংসা করত।হয়ত অাড়ালে কেউ হিংসেও করেছিল ।
একদিন পুরোনো অালমারিটা সাজাতে গিয়ে অপ্সরীর হাতে কিছু চিঠি উঠে এসেছিল। বেশ পুরোনো কাগজ, হাতের লেখা খুব সুন্দর । বেশ অাগ্রহ নিয়ে চিঠিগুলোর কয়েকটা বাক্য পড়ার পর ওর মনে হয়েছিল রায়ানের হয়ত অতীতে কোন মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অতীত নিয়ে কথা শোনাবার মত মেয়ে অপ্সরী ছিল না।
তাই চিঠিগুলো ভাঁজ করে অাবার পুরোনো জায়গায় সযত্নে রেখে দিয়েছিল ।
রায়ান পাল্টে যাচ্ছিল। সারাদিন অফিসের ব্যস্ততা শেষে বাসায় ফেরবার পর অপ্সরীর সামনে যেন সে গল্পের ঝুঁড়ি সাজিয়ে বসত। একেকটা কথা এমন ভঙ্গি করে বলত যে অপ্সরী হেসে খুন হয়ে যেত। এখন বাসায় এলে কোলে একটা ল্যাপটপ নিয়ে রায়ান কি সব কাজ করে। সবসময় ওর ব্যস্ততা । এ নিয়ে প্রশ্ন করলে রেগে যায়। অপ্সরী তার রাজকুমারকে অাঁচলে বেঁধে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু ভাগ্য অার বিধাতা অন্য কিছু তার কপালে লিখে রেখেছিল।
প্রতিদিনকার মত সেদিন ও রায়ান দেরী করে বাড়ি ফিরে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। প্রিয় মুখটা দেখার জন্য অপ্সরী নীরবে ঘরে এসেছিল। হঠাৎ সাইলেন্ট মুডে রাখা রায়ানের ফোনটায় অালো জ্বলে উঠেছিল। কৌতুহলের বশেই যখন ফোনটা অপ্সরী রিসিভ করে ওপাশ থেকে একটি নারীকন্ঠ ভীষন রোমান্টিক কন্ঠে রায়ানকে সম্বোধন করে এমন কতগুলো অশ্লীল কথা বলেছিল যা মুখে অানতেও অপ্সরীর ঘৃনা বোধ হয়েছিল।
অপ্সরী পরদিন তার বাবার কাছে ফোন করেছিল।না রায়ানের ব্যাপারে কোন অভিযোগ সে করেনি। কেবল বাবা অার মাকে দেখার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিল। বাবা বলেছিলেন সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অাসবেন। সেদিন বুকফাটা কান্না বুকে চেপে অপ্সরীকে অভিনয় করতে হয়েছিল। মেয়েদের হয়ত জন্মই হয়েছে অভিনয় করবার জন্য। সেই দিন থেকে অপ্সরী কেবল অাকাশের দিকে তাকিয়ে দিন গোনে। এই নরক ছেড়ে সে গাঁয়ের মেয়ে গাঁয়ে ফিরে যেতে চায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...