বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫

 

 

 

দুশ্চিন্তার চিকিৎসা

 

মূল:

রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی‎‎

জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২

মৃত্যুঃ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০২

একজন দেওবন্দি পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত ও ফকিহ ছিলেন। তিনি করাচিতে জামিয়াতুর রশিদ ও আল রশিদ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি আহসানুল ফতওয়ার রচয়িতা।

 

 

 

 

উর্দু থেকে অনুবাদ: [                 ]

 

 

 

 

 

ভূমিকা

 

এই পৃথিবীর রঙিন মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অগণিত চিন্তা। মানুষ বাহ্যিকভাবে হাসলেও, অন্তরে সে বয়ে বেড়ায় দুঃশ্চিন্তার ভার। প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যা তার মস্তিষ্কে জন্ম নেয়, আর পুরনো যন্ত্রণাগুলো কখনোই পুরোপুরি বিদায় নেয় না। এই বইটি তাদের জন্য, যারা মনে মনে হাঁপিয়ে উঠেছেন। যারা চায় কীভাবে এই অনির্বচনীয় দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যারা বিশ্বাসের আলোক রেখা খুঁজছেন অন্ধকার অভ্যন্তরে। যারা বুঝে ফেলেছেন এই পৃথিবীর স্বস্তি কেবল বাহ্যিক,
ভেতরে কেবল অস্থিরতা, চিন্তা আর অতৃপ্তির একেকটি পর্ব। এই অনুবাদ ও উপস্থাপনার উদ্দেশ্য একটিই পাঠকের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। এই বইয়ে যে উপলব্ধিগুলো আছে, তা কোনো এক ব্যক্তির নয়, বরং এ যেন হাজার বছরের বেদনার নির্যাস। এখানে উঠে এসেছে সেই গভীর উপলব্ধি
যা দুনিয়ার প্রেমে হারিয়ে যাওয়া হৃদয়কে আবারো প্রভুর দিকে ফিরিয়ে আনে। আপনি যদি সত্যিই মুক্তি চান, তবে এই বই আপনাকে সেই পথ দেখাবে যে পথে হাঁটলে দুঃখ থাকবে, কিন্তু আপনি তাতে ডুবে যাবেন না। চিন্তা থাকবে, কিন্তু আপনাকে কাবু করতে পারবে না। কারণ তখন আপনি জানবেন আল্লাহকে পাওয়াই শান্তির একমাত্র ঠিকানা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পৃথিবীজুড়ে অস্থিরতা:

পৃথিবীটা যেন এক দীর্ঘশ্বাস।

প্রতিটি ঘরে অশান্তি, প্রতিটি মুখে অপ্রাপ্তির ভাষা।

আপনি হয়তো কখনো কাঁদছেন টাকার অভাবে, কেউ কাঁদছে নামের অভাবে।

জীবন ছুটে চলে—আরো পাওয়ার আশায়, পেছনে ফেলে যায় আজকের আপন নিজেকে।

আপনি ভাবেন, “বন্ধুরা সবাই এগিয়ে যাচ্ছে, আর আমি তো থমকে আছি।”

অথবা ভয়ের ছায়া ঘিরে ধরে—“যদি একদিন সব হারিয়ে যায়?” এই দুই ভাবনায় মন হয়ে পড়ে বিবশ। এমন মনোভাব কেবল আপনার নয়, এ যেন পুরো মানবতার মানসিক মহামারি। যারা অনেক পেয়েছে, তারা শান্ত নয়, যারা কিছু পায়নি, তারা আর্তনাদ করে।

কারও ঘরে ঝলমল করছে সোনা,

কারও ঘরে কাঁদছে শিশু এক মুঠো ভাতের জন্য।

সবাই ভাবে, “যদি সবাই সমান হত!”

কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম—এখানে বৈষম্যই নিয়ম।

কারো হাতে বেশি, কারো হাতে কম।

এটাই এই দুনিয়া। এখানে পূর্ণতা নেই, থাকবে না।

তবুও, আপনি থেমে যেতে পারবেন না।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—“এই অস্থিরতায় শান্তি কোথায়?”

উত্তর আসবে ভেতর থেকে—

শান্তি কোনো ব্যালেন্সে নেই, কোনো ব্যাংক একাউন্টে নেই।

শান্তি আছে কেবল তৃপ্ত হৃদয়ের নিঃশ্বাসে।

যার হৃদয় কৃতজ্ঞ, তার কাছে সবকিছু আছে।

আর যার চাহিদা সীমাহীন, তারই সবচেয়ে বড় দরিদ্রতা।

তাই, থেমে যাবেন না, হাল ছাড়বেন না।

নিজের গতিকেই বুঝুন, অন্যের তুলনায় নয়।

এই পৃথিবী সমস্যায় ভরা ঠিকই। কিন্তু আপনি হতে পারেন তার সমাধানের অংশ।

 

জীবনের নিষ্পেষণ:

এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজে যে জিনিসটা ভেঙে পড়ে, তা হলো—আপনার সম্মান।
আপনি যদি নামী না হন, পদে ভারী না হন,
তাহলে মানুষ আপনাকে তুচ্ছ ভাববে।
মিথ্যা ছড়াবে, গুজব ছড়াবে, চোখ রাঙিয়ে কথা বলবে।
আপনার সততা, পরিশ্রম, আদর্শ—সবই তাদের কাছে মূল্যহীন হয়ে যাবে।

তবু হেরে যাবেন না। স্মরণ রাখুন,

মানুষের দেওয়া সম্মান অস্থায়ী,
কিন্তু আপনার আত্মমর্যাদা চিরস্থায়ী।
আপনি নিজেকে যেভাবে মূল্য দেন,
একদিন বিশ্বও আপনাকে সেভাবেই মূল্য দেবে।

 

রোগ যখন জীবন কেড়ে নেয়:

কিছু ব্যথা আছে, যা ওষুধেও সারে না। ডাক্তারের চেম্বার থেকে তাবিজ-কবচ,
সব জায়গা ঘুরেও আপনি হয়তো সুস্থ হন না। শরীরের কষ্টই এক সময় মন, সংসার, সম্পর্ক—সবকিছু গ্রাস করে। তবু এটাই শেষ নয়। আপনার কষ্ট আপনাকে গড়ে তোলে—
অন্যদের মতো নয়, ভেতর থেকে শক্ত, সাহসী এক মানুষ।

 

শত্রু নামের নীরব আগুন:

কেউ হয়তো আপনাকে ভালোবাসার মুখে বিষ দিচ্ছে।
সামনে মিষ্টি কথা, পেছনে ক্ষতির ফাঁদ। কখনো জীবনের হুমকি, কখনো মানহানি।
শত্রু যেন ছায়ার মতো—লুকিয়ে থাকে।

তবু ভয় পাবেন না। আপনি যদি সত্যের উপর থাকেন, তবে কোনো শত্রুই আপনাকে ঠেকাতে পারবে না।

 

 

আকস্মিক বিপদ আর উদ্বেগ:

যে কোনো মুহূর্তে আগুন লেগে ছাই হয়ে যেতে পারে সবকিছু,
ট্রাফিক দুর্ঘটনায় হারাতে পারে প্রাণ, অথবা ধ্বসে পড়তে পারে ভবন, সাগর কিংবা আকাশেও ঘটে যেতে পারে আকস্মিক বিপদ। এমন ঝামেলার মাঝে আমরা অসহায়, উদ্বিগ্ন, দিশাহীন।

 

দাম্পত্য সমস্যা:

বিয়ে করার উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজে না পেয়ে মন টালমাটাল হয়,
অথবা যখন বিয়ে হয়, তখন দেখা দেয় ভিন্ন এক যন্ত্রণা।
বাবা-মায়েরা দিনের পর দিন তাবিজ, নামাজ, ওযিফা—

সব চেষ্টার পর যখন বিয়ে সম্পন্ন হয়, তখন শুরু হয় মতবিরোধের আগুন
যেখানে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য হয়ে ওঠে কষ্ট ও শোকের কারণ।

 

সন্তান না হওয়ার সমস্যা:

সন্তান হচ্ছে না, হাজার চেষ্টার পর যদি হয়েও যায় এরপর শুরু হয় আরেক পেরেশানী- কথা তো শোনেই না, মানুষের সামনে হতে হয় অপমান।

 

একটা মজার ঘটনা:

এক লোক বসেবসে কাঁদছিল,

"হে আল্লাহ, আমাকে একটি ঘোড়া দাও!

হে আল্লাহ, আমাকে একটি ঘোড়া দাও!"

এক সিপাহির ঘোড়া রাস্তায় বাচ্ছা প্রসব করল। সিপাহি সে লোকটিকে চাবুক মেরে বলল, "এই বাছুরটি তুলে আস্তাবলে নিয়ে চল।" লোকটি ঘোড়ার বাচ্চাটিকে নিয়ে যাচ্ছিল এবং বলে যাচ্ছিল, "হে আল্লাহ, দোয়া তো তুমি শোনো ঠিক, তবে বুঝ নাআমি চেয়েছিলাম আরোহনের জন্য ঘোড়া, কিন্তু ঘোড়াকেই তো আমার উপর দিলে আরোহন করিয়ে।

 

বিবাহ এবং সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই কথা। আমি যে জিনিসগুলি চেয়েছিলাম, সেগুলিকে আশীর্বাদ এবং অনুগ্রহ ভেবেছিলাম, এবং সেগুলি নিয়ে চিন্তিত ছিলাম, যখন সেগুলি পেয়েছি, তখন মনে হচ্ছে আরামের পরিবর্তে কষ্ট এবং অনুগ্রহের পরিবর্তে শাস্তি পেলাম।

 

ومن يحمد الدنيا لعيش يسره

فسوف لعمرى عن قريب يلومها

اذا ادبرت كانت على المرء حسرة

واذ قبلت كانت كثيرا همومها

 

"যে ব্যক্তি দুনিয়ার আনন্দের জন্য প্রশংসা করে,

সে তা অনুভব করার পর শীঘ্রই এর দোষ খুঁজে পাবে।

যদি দুনিয়ার আনন্দ না থাকে, তাহলে আকাঙ্ক্ষা এবং উদ্বেগ থাকবে,

এবং যদি থাকে, তাহলে উদ্বেগ এবং উদ্বেগ থাকবে।"

 

 

 کسی کو رات دن سرگرم فریاد و فغاں پایا

 کسی کو فکر گوناگوں سے ہردم سرگراں پایا

 کسی کو ہم نے آسودہ نہ زیر آسمان پایا

 بس اک مجذوب کو اس غمکدہ میں شادماں پایا

غموں سے بچنا ہو تو آپ کا دیوانہ ہو جائے

 

কাউকে দেখি দিন-রাত শুধু কান্নায় ভেজা,
কারো মন ভরা চিন্তায়, জীবন যেন বেজা।
আকাশের তলে শান্ত কেউ ছিল না জানা,
শুধু এক পাগলই হাসে এই দুঃখের খানা।

যদি বাঁচতে চাও তুমি দুঃখের ভয়ানক স্রোতে,
তবে হও পাগল তারই, যাঁর প্রেম থাকে জোতে।

 

যার হাতে সম্পদের ভাণ্ডার, সম্মানের চূড়া, স্বাস্থ্য ও আরামের অনন্ত উৎস—সেই পরম করুণাময় স্বয়ং ঘোষণা করেছেন:

 

﴿ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَتَطۡمَىِٕنُّ قُلُوبُهُم بِذِكۡرِ ٱللَّهِۗ أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَىِٕنُّ ٱلۡقُلُوبُ﴾

﴿ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ طُوبَىٰ لَهُمۡ وَحُسۡنُ مَـَٔابࣲ﴾

 

"এরা সেই সব লোক, যার ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখ, কেবল আল্লাহর যিকিরেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। (মোটকথা) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গলময়তা এবং উৎকৃষ্ট পরিণাম। " [সূরা রা'দ: ২৮, ২৯]

 

জীবনে যদি অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ, শত্রুতা, দুর্ঘটনা বা দুঃসহ যন্ত্রণায় ভুগতে থাকো—জেনে রেখো, একমাত্র নিরাময় এক প্রভুর সন্তুষ্টিতে। তিনি বলেন—

 

﴿مَنۡ عَمِلَ صَـٰلِحࣰا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنࣱ فَلَنُحۡیِیَنَّهُۥ حَیَوٰةࣰ طَیِّبَةࣰۖ وَلَنَجۡزِیَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ﴾

"যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।"
[
সূরা নাহল: ৯৭]

 

স্রেফ দুটি কাজ- ঈমান আর নেক আমল। আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা যে, তিনি নিশ্চই অবশ্যই এবং সু-নিশ্চিত প্রশান্তির জীবন দান করবেন।

এই আয়াতে রয়েছে তিনটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি—
আল্লাহর শপথ, জোর যুক্ত বাক্য, এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

তিনি কথা দিয়েছেন এবং তিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন—
"
যে আমার সন্তুষ্টি অর্জনে আত্মনিয়োগ করে, আমি তাকে প্রতিটি বিপদ ও দুশ্চিন্তার আবরণ থেকে মুক্ত করব এবং অন্তরে উপহার দেব অপার প্রশান্তি।"

 

তিনি বলেন:

"আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে দুর্বিষহ। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়।

সে বিস্ময়ে বলবে, 'হে আমার প্রতিপালক, কেন তুমি আমাকে অন্ধ করে উত্থিত করলে, অথচ ইতোপূর্বে তো আমি ছিলাম দৃষ্টিসম্পন্ন?'

উত্তরে বলা হবে, 'তুমি যেমন আমার নিদর্শনগুলো ভুলে গিয়েছিলে, আজ আমিও তোমাকে তেমন করেই ভুলে গিয়েছি।'

আর যে সীমালঙ্ঘন করে, এবং তার প্রভুর নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে না, আমি তাকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি। বস্তুত, আখিরাতের শাস্তি আরও কঠোর, আরও দীর্ঘস্থায়ী।”

[সূরা ত্বা-হা: ১২৪–১২৭]

 

এই আয়াতে প্রভু অত্যন্ত জোর দিয়ে ঘোষণা করেছেন,

যে ব্যক্তি তাঁর নির্দেশনাকে অবহেলা করবে, যিনি তাঁর আদেশকে উপেক্ষা করে চলবে, তার জীবনে আমি স্বস্তির ছোঁয়া দেব না।

সে হয়তো একদিন অর্জন করবে সারা পৃথিবীর রাজত্ব, অর্জন করবে অগণিত সম্মান, পদমর্যাদা ও খ্যাতি।

সমগ্র পৃথিবী হয়তো তার প্রশংসায় মুখরিত থাকবে, ধন-সম্পদ, প্রতিপত্তি, গৌরব সবই থাকবে তার আয়ত্তে।

তবুও—আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিশ্চিতভাবেই নিয়েছি, তার হৃদয়ে শান্তির স্রোত প্রবাহিত হতে দেব না।

তাকে আমি রাখব উদ্বিগ্ন, অস্থির, দিশাহীন এক জীবনে।

এ সিদ্ধান্ত এই পার্থিব জীবনের জন্য।

আর আখিরাতে—আমি তাকে উঠাব অন্ধ অবস্থায়।

সে কাতর কণ্ঠে বলবে...

 

হে আল্লাহ, আমি তো দুনিয়ায় অন্ধ ছিলাম না, তাহলে কেন আমাকে তুমি আখিরাতে অন্ধ করে উপস্থিত করলে?

 

উত্তর হবে: আপনি তো দুনিয়ায় আমার আদেশকে উপেক্ষা করে চলতেন। আপনি চোখে দেখে অন্ধের মতো ছিলেন। তাই আজ আমি আপনাকে সত্যিকার অর্থেই অন্ধ করে উঠালাম।

 

এটি সেই ভয়ংকর কিয়ামতের একটি মুহূর্ত। সামনের হিসাব নিকাশ, জবাবদিহি এবং তার পরে যা আসবে, তা হবে আরও কঠিন ও কঠোর। মহান আল্লাহ যেন তাঁর অসীম রহমতে আমাদের সেই দিনের জন্য প্রস্তুতির সুযোগ করে দেন, এবং সেই ভয়াল সময় আসার আগেই যেন আমাদের অন্তরে পরকালীন জবাবদিহির অনুভব জাগিয়ে দেন।

 

আসলে প্রতিটি সংকটের প্রতিকার একটিই—ঈমান এবং সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা। কিন্তু এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা জরুরি, তা হলো—সৎকর্ম বলতে আমরা কি বুঝি?

 

সাধারণভাবে মানুষ মনে করে, বেশি বেশি ইবাদত করলেই সে ‘সৎকর্মশীল’ হয়ে যায়। কিন্তু আসল বিষয়টা আরও গভীর। প্রকৃত সৎকর্ম হলো—আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে নিজেকে দূরে রাখা। এই ভুল বুঝাবুঝির কারণে বহু মানুষ বাহ্যিক ইবাদতের মাঝে আত্মতুষ্টিতে ভুগে, অথচ নিজের গোনাহগুলোকে ভুলে যায়।

 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা হারাম থেকে বাঁচো—তাহলেই আল্লাহর বান্দা হয়ে যাবে।”

 

অর্থাৎ, পাপ থেকে বিরত থাকাই সর্বোত্তম ইবাদত।

 

আপনি নফল নামাজ পড়ুন, তাহাজ্জুদের জন্য ওঠুন, তাসবিহ, যিকির, তেলাওয়াত করুন—সবই ভালো কাজ। কিন্তু এত কিছুর পরেও যদি আপনি গোনাহে লিপ্ত থাকেন, তাহলে এগুলো আপনাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবে না।

 

অন্যদিকে, আপনি যদি শুধু ফরজ নামাজ পড়েন, গোনাহ ত্যাগ করেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, আন্তরিকভাবে তওবা করেন, তবে আপনি নিঃসন্দেহে রক্ষা পাবেন।

 

কারণ পাপ থেকে বিরত থাকা হলো চিকিৎসা, আর ইবাদত হলো পুষ্টিকর খাবার।

 

একজন রোগীর যদি চিকিৎসা না হয়, কেবল খাবার খেয়ে সে সুস্থ হবে না। বরং সে আরও অসুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তেমনই, পাপ থেকে তওবা না করে ইবাদতে ডুবে গেলে তা আত্মাকে শুদ্ধ করে না।

 

তওবা হলো আত্মার পরিচ্ছন্নতা, নফল ইবাদত হলো তার অলংকার।

 

যদি কাপড় নোংরা থাকে, কিংবা লোহা মরিচায় ছেয়ে যায়, তাহলে শুধু রঙ করলেই তা সৌন্দর্য পাবে না। আগে নোংরা দূর করতে হয়, মরিচা দূর করতে হয়, তারপর তেল বা রঙ কার্যকর হয়।

 

তেমনই, আগে আপনার হৃদয়কে তওবার মাধ্যমে পবিত্র করুন। তারপর ইবাদতের আলো দেখবেন। তখন ইবাদতের আস্বাদ পাবেন, রূহের প্রশান্তি অনুভব করবেন।

 

হযরত রুমী (রহঃ) এক অমূল্য কথা বলেছিলেন —

"আপনি জানেন কি কেন আপনার হৃদয়ে আর প্রার্থনার সাড়া নেই? কারণ, মরিচায় আচ্ছাদিত মুখ কখনো আলোকে ধারণ করতে পারে না। প্রথমে সেই মরিচা মুছে ফেলুন। তবেই আপনি হৃদয়ের আলো চিনতে পারবেন।"

 

আপনার হৃদয় এক আয়নার মতো। সেই আয়নায় যদি পাপের কুয়াশা জমে থাকে, তবে তাতে আল্লাহর প্রেম প্রতিফলিত হবে কীভাবে? পাপই তো সেই মরিচা, যা ঈমানের দীপ্তি নিভিয়ে দেয়। তাই প্রথম কাজ হলো—এই মরিচা দূর করা। তখনই আলোর স্পর্শ আপনি অনুভব করবেন, ঈমানের সত্যি রূপ আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

 

জাহান্নাম থেকে মুক্তি কেবল ইবাদতের মাধ্যমে নয়, বরং পাপ পরিহারের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। আপনি যত রাত জেগে ইবাদতই করুন না কেন, যদি পাপ ত্যাগ না করেন, তাহলে মুক্তি অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

 

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সতর্ক করে বলেছেন:

কিয়ামতের দিন এমন অনেক মানুষ আসবে, যাদের আমল হবে তিহামার পাহাড়সম। তবুও তাদের ডাকা হবে জাহান্নামের পথে। তারা বলবে, ‘হে আল্লাহর রাসূল, তারা কি সালাত আদায় করত না?’ তিনি বলবেন, ‘হ্যাঁ, তারা সালাত আদায় করত, রোজা রাখত, এমনকি রাতে জেগেও থাকত। কিন্তু যখন তাদের সামনে দুনিয়ার কিছু উপস্থাপন করা হতো, তারা তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ত।’”

– (ইহইয়া উলুমুদ্দীন, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২০৪)

 

কিয়ামতের দিন এমন এক বিশাল দল উপস্থিত হবে, যাদের নেক আমল পাহাড়সম ভারী। কিন্তু তাদের জন্য নির্দেশ থাকবে—জাহান্নামে নিক্ষেপের। সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) প্রশ্ন করলেন,

"হে আল্লাহর রাসূল, এতো আমল থাকা সত্ত্বেও কি তারা জাহান্নামে যাবে?"

তিনি জবাব দিলেন,

"হ্যাঁ, তারা নামাজ আদায় করত, রোজা পালন করত এবং রাতে ইবাদতের জন্য জেগে থাকত।"

তবু, যখনই তাদের সামনে পাপের সুযোগ আসত, তারা তৎক্ষণাৎ তাকে আলিঙ্গন করত।

 

সত্যিই, সমস্ত দুঃখের ও সমস্যার মূলে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টির অভাব। সেই মালিককে খুশি করা ছাড়া কোনো সমাধান নেই। তার প্রশংসা ও স্বেচ্ছায় ইবাদত, নফল নামাজ, রোজা, দান-খয়রাত বা মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণও তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না যদি তার আদেশ অমান্য করা হয়।

 

আপনি ভাববেন, কেউ যদি প্রতি বছর হজ্জ করেন, দরিদ্রদের সাহায্য করেন, মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থ দেন, কিন্তু অন্যদিকে ঘুষ গ্রহণ করেন, ওজনে কম দেন, বান্দাদের অধিকার লুণ্ঠন করেন, তাহলে তিনি কী সত্যিই সৎকর্মে সিদ্ধহস্ত? না, তিনি নিজেকেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দিয়েছেন।

 

মহান আল্লাহ বলেন,

"যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে ব্যর্থ হয়েছে, অথচ তারা মনে করে যে তারা ভালো কাজ করছে।" (সূরা আল-কাহফ: ১৮-১০৪)

 

সুতরাং, সৎকর্মের ভিত্তি হলো পাপ ত্যাগ করা এবং নিজ কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করা। এই দুই ছাড়া স্বেচ্ছায় নামাজ-যিকির বা অন্য ইবাদত আপনার অন্তরকে আলোকিত করবে না।

 

যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে পাপ থেকে সরে আসবে, সে এমন এক ঐশ্বরিক ভালোবাসার স্পর্শ পাবে যা তার হৃদয়ে শিকড় গেড়ে বসবে। হযরত মাজযূব (রাঃ) বলেছেন, এই গভীর প্রেম ও সম্পর্ক তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন মানুষ তার পাপ থেকে আন্তরিকভাবে তওবা করে। তখন সে নিজের ইবাদতকেও এক নতুন মাত্রায় অনুভব করবে, তার জীবনে আল্লাহর স্মরণে আনন্দ ও প্রশান্তি ভেসে উঠবে।



সব ইচ্ছা নিভে গেছে... এখন এসো, আলো জ্বালাই অন্তরে...

 

কখনো কখনো এমন সময় আসে, যখন জীবনের সব রং ফিকে হয়ে যায়। চারপাশে মানুষ থাকে, কিন্তু ভেতরটা খালি খালি লাগে। তখনই মনে হয়, আর কেউ না—এখন নিজেকেই নিজে বদলাতে হবে। ফরজ নামাজ পড়া অবশ্যই দরকার। কিন্তু ভাই, শুধু ফরজ দিয়ে হয় না।

পাপ ছাড়তে হবে। নফল ইবাদতের মাধ্যমে হৃদয়টা ধুয়ে নিতে হবে।

 

নফস আর শয়তান বড় চালাক। তারা বলেছে—নামাজ পড়, নফল কর, কিন্তু পাপ? ওটুকু করলে কী এমন হবে?

কিছু কিছু ওয়াজিনও তাই বলেন—তাসবিহ পড়ো, দান করো, যিকির করো...

কিন্তু ভাই, পাপ? কেউ কিছু বলে না।

 

এইভাবে কি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন? এইভাবে কি দীন টিকে থাকবে?

না ভাই, বরং এই ভুল ধারায় চলেই অসংখ্য মানুষ একে একে বিদআতের খাদে পড়ে যাচ্ছে।

দেখুন না, মানুষ এখনো চোখ বুজে অন্ধভাবে পূর্বপুরুষদের পথ ধরে চলছে—কোনো যাচাই নেই, বিচার নেই।

সত্য কথা বলার লোকের বড় অভাব।

 

এই অবস্থায় হযরত আক্বদাস (দা.বা.) আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললেন—

"হে আল্লাহ! আমার মৃত্যুর আগে এমন কিছু মানুষ সৃষ্টি করে দাও, যারা সত্য বলবে, সঠিক পথ দেখাবে..."

এই প্রার্থনায় তাঁর চোখ অশ্রুতে ভিজে যায়।

 

দেখুন, আমরা অনেক সময় এমন কিছু ভুল করি, যেটা ভাবতেও ভয় লাগে।

যেমন: কারো মাথাব্যথা হলে বলি—পাপ ত্যাগ করো, সব ঠিক হয়ে যাবে!

এটা যেমন একদিক থেকে ঠিক, অন্যদিকে ভয়ংকর ভুল।

শরীরের অসুখের চিকিৎসা করতে হবে ডাক্তারের কাছে গিয়ে, আর আত্মার রোগ সারাতে হবে পাপ ত্যাগ করে।

 

দু'টো পথ—দু'টোই দরকার।

 

শেষে একটা কথা বলি, ভাই—

আপনি যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সত্যিকারের ভালোবাসেন, তবে তাঁর প্রতিটা আদেশ আপনাকে মানতেই হবে।

আপনার মন চাইল কি না চাইল, মতামত মিলল কি না মিলল—

ঈমান তো মানেই নিজের সবকিছু আল্লাহর হাতে সঁপে দেওয়া।

সেখানে নিজের যুক্তি, নিজের পছন্দের কোনো জায়গা নেই।

 

একটি প্রশ্ন, একটি পথ, একটি সমাধান

 

আপনি হয়তো ভাবছেন—

মাথাব্যথা হলে তো প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে যেতে হয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। তাহলে কেউ যদি বলে, “তুমি পাপ ত্যাগ করো, অনুতপ্ত হও, তাহলে মাথাব্যথা সেরে যাবে, হৃদরোগ দূর হয়ে যাবে”—তাহলে ব্যাপারটা কি উদ্ভট শোনায় না?

 

একটা প্রচলিত যুক্তি এটাও: খিঁচুনি হলে তো নিউরোলজিস্টের কাছে যেতে হয়, গুনাহ মাফ চাওয়ার কথা বললে কি সেটা থেমে যায়?

 

প্রশ্নটা যৌক্তিক মনে হতেই পারে। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে চলুন, আমরা এই যুক্তির গভীরে একটু নামি।

 

প্রথম উত্তর:

আপনি যদি সত্যিকার অর্থে একজন মুসলমান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ঈমানের একটি মৌলিক শর্ত হলো— আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) যা কিছু বলেছেন, আপনি তাতে বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস রাখবেন এবং আত্মসমর্পণ করবেন।

আপনার বোধ, যুক্তি, শিক্ষা, অনুভূতি—এসবের বাইরে গেলেও, আপনি মেনে নেবেন, কারণ তা এসেছে সেই প্রভুর পক্ষ থেকে, যাঁর উপর আপনি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন।

 

এটা কি কেবল অন্ধ বিশ্বাস? না, বরং গভীর চিন্তার একটা আহ্বান।

 

চলুন একটু ভাবুন—

এই পৃথিবীতে যেসব নিয়ামত আপনি পান—স্বাস্থ্য, সম্পদ, সম্মান, আরাম-আয়েশ—সবই কি মানুষের হাতে? নাকি আল্লাহর হাতে?

 

আপনার মাথাব্যথা, আর্থিক সংকট, সম্পর্কের জটিলতা, হৃদয়ের বিষণ্নতা—এসব কি আল্লাহর অজান্তে আপনার জীবনে এসেছে? না কি তিনি চান, এর মধ্যে দিয়ে আপনি কিছু উপলব্ধি করুন?

 

আপনি বিশ্বাস করেন তো, আল্লাহ তাআলা চাইলে মুহূর্তেই আপনাকে সুস্থ করে দিতে পারেন? চাইলে সমস্যার পাহাড় সরিয়ে দিতে পারেন?

তাহলে প্রশ্ন হলো—তিনি এখনও কেন তা করেননি?

 

এখানেই আসে দ্বিতীয় উত্তর:

কোনো সম্পদের মালিক যদি খুশি না হন, আপনি কি তাঁর ভান্ডার থেকে কিছু নিতে পারবেন?

অবশ্যই না।

হয়তো আপনি কোনো মানুষের কাছ থেকে সুপারিশ, চুরি, বা জোর করে কিছু আদায় করে নিতে পারেন, কিন্তু আল্লাহর ভাণ্ডারে এই কৌশল চলে না।

 

তাঁকে রাজি না করিয়ে, সন্তুষ্ট না করে, তাঁর কাছ থেকে আপনি কিছুই পাবেন না।

আর তাঁকে সন্তুষ্ট করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম?—তাঁর কাছে ফিরে যাওয়া। নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

 

আপনার মাথাব্যথা বা হৃদরোগের পেছনেও হতে পারে এমন কোনো কারণ, যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। হতে পারে, আপনার প্রভু আপনাকে ডেকে নিচ্ছেন—

ফিরে এসো। আমার দিকে ফিরে এসো। আমি তোমার সব সমস্যার সমাধান।”

 

তাই বলেছিলাম, হয়তো এই প্রেসক্রিপশনটিকে অদ্ভুত মনে হচ্ছে—

"পাপ ত্যাগ করো, অনুতপ্ত হও, তাহলেই নিরাময় আসবে।"

কিন্তু গভীরে গেলে আপনি দেখবেন—এটাই সবচেয়ে যৌক্তিক প্রেসক্রিপশন।

 

পাপ ত্যাগ করলে কীভাবে সমস্যার সমাধান হয়?

 

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, কেন আপনার জীবনে বারবার বিপদ আসে? কেন মনটা অশান্ত, জীবনটা ভারী লাগে? আমি সবসময়ই বলি—সমস্যার একমাত্র মূল কারণ হলো পাপ। আর এর একমাত্র সমাধান হলো পাপ ত্যাগ করা। কিন্তু কেমন করে? কীভাবে পাপ থেকে ফিরে এসে আপনি নিজের জীবনকে বদলে দিতে পারেন?

 

চলুন, সংখ্যাবদ্ধভাবে দেখে নিই পাপ ত্যাগের মাধ্যমে কীভাবে আপনি শান্তির পথ খুঁজে পেতে পারেন।

 

---

 

  পাপ ত্যাগ করলে দুশ্চিন্তা কেটে যাওয়ার ১ম কারণ:

 

আপনার দুশ্চিন্তার প্রথম ও প্রধান কারণ পাপ। পাপ হৃদয়ে এমন এক অস্থিরতা তৈরি করে, যার ফল আপনি টের পান জীবনের প্রতিটি স্তরে—পরিবার, জীবিকা, ইবাদত এমনকি ঘুমের মধ্যেও।

 

আল্লাহ তা'আলা স্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআনে বলেন:

"মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করান, যেন তারা ফিরে আসে।"

সূরা আর-রূম, আয়াত ৪১

 

 

  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন লেখাগুলো পড়ুন...

      দুশ্চিন্তার চিকিৎসা   মূল: রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি উর্দু: مفتی رشید احمد لدھیانوی ‎‎ জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ মৃত্যু...